দাবি না মানলে এবার অনশনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বুধবার (গতকাল) ইনস্টিটিউটের পরিচালকের সঙ্গে আলোচনার কথা থাকলেও পরিচালক ক্যাম্পাসে আসেননি। আগামীকাল (আজ) বৃহস্পতিবারও যদি তিনি আলোচনায় না বসেন তাহলে আগামী রোববার থেকে অনশন শুরু করবেন তারা। এদিকে ইনস্টিটিউটের ভবনগুলো কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব পরীক্ষা করার জন্য একজন প্রকৌশলী সেখানে যান। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাকে ভিতরে ঢুকতে দেননি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া আজাদীকে বলেন, চারুকলার ভবনগুলো পরীক্ষা করার একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ভবন পরীক্ষা করে দেখার জন্য বুধবার একজন প্রকৌশলী নিয়ে সেখানে যান, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের ঢুকতে দেয়নি।
জানা যায়, এর আগে গত বছরের ২ নভেম্বর অবকাঠামোর উন্নয়ন চেয়ে ২২ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের এক দফাতে রূপ নেয় আন্দোলনটি। শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ অন্যদের আশ্বাসে গত ২৩ জানুয়ারি এক সপ্তাহের জন্য ক্লাসে ফেরেন শিক্ষার্থীরা। তবে এই এক সপ্তাহে একাডেমিক ভবনকে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি অভিযোগ এনে বুধবার ক্লাস বর্জন করে ফের আন্দোলনে যান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মেহেদী আলম বলেন, আমরা আমাদের ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের মতামত জানতে চাই যে তারা ক্যাম্পাস স্থানান্তরের পক্ষে আছেন কি–না। এ জন্য বুধবার পরিচালক ম্যাম আলোচনায় বসতে সম্মত হন। আমরা সকাল থেকে অপেক্ষা করে থাকলেও পরে তিনি আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবারও যদি তারা আলোচনায় না বসেন তাহলে রোববার থেকে সুষ্ঠু সমঝোতায় না পৌঁছানো পর্যন্ত অনশন করব আমরা।
অপরদিকে ক্লাসে ফেরার দাবিতে গত মঙ্গলবার অবস্থান করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশকে। জানা যায়, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা চায় নিয়মিত ক্লাস হোক। চলমান আন্দোলনের সঙ্গে তারা একমত না। এসময় তারা মানববন্ধনে লিখেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে চারুকলা খোলার পর বন্ধ কেন? আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই।
ক্লাসে ফিরতে চাওয়া শিক্ষার্থী অরিত্রা ধর বলেন, শুরুর ২২ দফার দাবিগুলো আমাদেরও চাওয়া। কিন্তু হুট করে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের যে এক দফা দাবি তোলা হয়েছিল তাতে অনেকের মতামত নেওয়া হয়নি। তাছাড়া ক্যাম্পাসে ফিরতে আমরাও চাই। যেহেতু এটা কিছুটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার সেজন্য ক্লাস বন্ধ করে দিয়ে একাডেমিক ক্ষতি করা অযৌক্তিক। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ক্লাস করতে চায়। তবে বিভিন্ন কারণে সম্মুখে বলতে পারছেন না। এছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক চাপের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখা উচিত।
এ ব্যাপারে সহকারী প্রক্টর মুহম্মদ ইয়াকুব বলেন, চারুকলার একাডেমিক ভবনকে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণার কাজে গঠিত কমিটিসহ বুধবার চারুকলা ক্যাম্পাসে যাওয়ার চেষ্টা করি আমরা। তবে শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই আমাদের সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাদের অসহযোগিতামূলক আচরণের জন্য যারা ক্লাস করতে চায় তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর সুফিয়া বেগম বলেন, শিক্ষার্থীরা আলোচনার কথা জানালে আমি এক কথায় সম্মত হই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি একটা মিটিংয়ের কারণে সকালে সময় দিতে পারিনি। সেটা আমি শিক্ষার্থীদের জানিয়েছিও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ যদি তাদের সঙ্গে আলোচনা করি তাহলে সেটা আরও বেশি ফলপ্রসু হবে।