পথে পথে আজ হাঁকিব, বন্ধু, ঈদ মোবারক! আস্সালাম!/ ঠোঁটে ঠোঁটে আজ বিলাব শিরনী ফুল–কালাম!/ বিলিয়ে দেওয়ার আজিকে ঈদ!/ আমার দানের অনুরাগে–রাঙা ঈদগা রে!/ সকলের হাতে দিয়ে দিয়ে আজ আপনারে-/ দেহ নয়, দিল হবে শহিদ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘ঈদ মোবারক’ কবিতায় এবাবেই বর্ণনা করেছেন ঈদের; যেখানে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার বার্তা দিয়েছেন কবি।
আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ত্রিশ দিনের সিয়াম সাধনার পর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ঈদ। শব্দগতভাবেও ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। তবে গত দুই বছর (২০২০ ও ২০২১) করোনা পরিস্থিতির কারণে ঈদে সরকারি কিছু বিধিনিষেধ ছিল। তাই গত দুই বছরের ঈদ ছিল অনেকটা বিবর্ণ। ভাটা পড়ে আনন্দ উদযাপনে। এবার পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। নেই সরকারি বিধিনিষেধও। তাই এবার ঈদের সত্যিকার আনন্দে মাতবে সবাই। সেই আনন্দের ছোঁয়া অবশ্য ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। চারদিকে যেন ঈদের আমেজ। এখন কেবল অপেক্ষা। পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে ঘরে ঘরে বেজে উঠবে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দিবি শোন আসমানি তাগিদ।’
ঈদ হচ্ছে ইসলামী কৃষ্টি কালচারের অনন্য বহিঃপ্রকাশ। ঈদ শব্দের আরেক অর্থ বারবার ফিরে আসা। আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদ প্রতি বছর মুসলিম সমাজে বারবার ফিরে আসে বলেই এ উৎসবের অন্য নাম ঈদ। এটি মুসলিম উম্মাহর প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ ঈদকে ঘিরে ধনী–গরিব সকলের মাঝে বয়ে যায় আনন্দ বার্তা। ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় সকল সংকীর্ণতা ও মলিনতা। এই দিনটি মানুষের মধ্যে সাম্য ও সমপ্রীতির মেলবন্ধন তৈরি করে। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ঈদুল ফিতর। প্রথম রমজান থেকেই ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে ঈদ উদযাপনের মানসিক প্রস্তুতি। ১৫ রমজানের পর গতি পেয়েছে তাতে। তবে সবাই দল বেঁধে আজ আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ খোঁজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে সেই আনন্দ উদযাপনের প্রথম ধাপ।
সারা বছরই চাঁদ উঠে আকাশে। কিন্তু শাওয়াল মাসের এই চাঁদ দেখার জন্য যেভাবে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন তা বছরের অন্য সময়ে দেখা যায় না। পরিবার ও স্বজনের সঙ্গে উদযাপনের মধ্য দিয়েই পূর্ণতা পায় ঈদ আনন্দ। তাই সবাই ছুটছেন নিজ নিজ এলাকায়। গত কয়েকদিন ধরে রেলস্টেশন, বাসস্টেশন সবখানেই ভিড় ঘরমুখো মানুষের। ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে নগরী। সবাই নাড়ির টানে ছুটছেন গ্রামের দিকে।
ঈদের দিন সবাই পরিধান করে নতুন জামা। তাই নতুন জামা কিনতে প্রথম রমজান থেকেই বিভিন্ন শপিং মলে ভিড় করতে দেখা গেছে। সারা বছরই মানুষকে কেনাকাটা করতে হয়। কিন্তু ঈদকে উপলক্ষ করে যে কেনাকাটা তার উপলব্ধি, শিহরণ, ভালোলাগা, অনুভূতি অন্যরকম। সারা বছর কেনাকাটা করতে হয় ঠিকই, কিন্তু এসব কেনাকাটা ঈদের কেনাকাটার মতো অতটা তাৎপর্যবহ নয়। ঈদের দিনে নতুন কাপড় পরার অনুভূতিই অন্যরকম।
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, পবিত্র রমজানে আমরা সিয়াম ও সংযম সাধনায় যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করেছি তা সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হলেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। মেয়র নগর জীবনে যা কিছু সমস্যা আছে তা সমাধানে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
এছাড়া ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এদিকে এবার সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের মাঠসহ নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের দিন সকাল ৮টায় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ মাঠে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে ঈদ জামাতস্থল পুরোপুরি নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে। এছাড়া লালদীঘি সিটি কর্পোরেশন শাহী মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে চসিকের তত্ত্বাবধানে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলগণের তত্ত্বাবধানে একটি করে প্রধান ঈদ জামাত সংশ্লিষ্ট মসজিদ অথবা ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে।