চট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভাকে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ

করোনা মোকাবেলা, মশক নিধন ও উন্নয়ন সহায়তা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

করোনা মোকাবেলাসহ পৃথক তিনটি খাতে চট্টগ্রামসহ দেশের ৩২৮টি পৌরসভাগুলোর জন্য ৬৯ কোটি ৮৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ছাড় করেছে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভা পেয়েছে তিন কোটি ১৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা। করোনা সামগ্রী ক্রয় ও বিতরণ, মশক নিধনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়, জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচার-প্রচারণা, পৌর এলাকায় স্যানিটেশন সুবিধা বৃদ্ধি এবং পৌরসভা উন্নয়ন প্রকল্পে ছাড়কৃত অর্থ ব্যয় করা হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে (২০২১-২০২২) বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে দেশের পৌরসভাগুলোর জন্য তিনটি খাত তথা করোনা মোকাবেলা, মশক নিধন ও উন্নয়ন সহায়তা থোক খাতে মোট বরাদ্দ আছে ২৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহায়তা থোক খাতে ২৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, করোনা মোকাবেলায় ২৫ কোটি টাকা এবং মশক নিধনে ২০ কোটি বরাদ্দ আছে। বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়করণে গত ২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগে উপ-সচিব ফারজানা মান্নান একই বিভাগের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর পৃথক তিনটি সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন পত্র পাঠান।
অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পৌরসভাগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ পৌরসভা ক, ৫ পৌরসভা খ এবং দুইটি পৌরসভা গ শ্রেণিভুক্ত। এর মধ্যে ক শ্রেণির পৌরসভা এক কোটি ৭৩ লাখ টাকা, খ শ্রেণির পৌরসভা এক কোটি তিন লাখ টাকা এবং গ শ্রেণির পৌরসভা ৩৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা পেয়েছে। চট্টগ্রামের ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভাগুলো হচ্ছে হচ্ছে পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, রাউজান। ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভাগুলো হচ্ছে মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী। গ শ্রেণির পৌরসভা দুটি হচ্ছে নাজিরহাট ও দোহাজারী।
করোনা মোকাবেলা : ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দের ‘কোভিড-১৯ (করোনা) মোকাবেলা’ উপ-খাতে দেশের ৩২৮টি পৌরসভার জন্য বরাদ্দ আছে ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে তৃতীয় কিস্তি বাবদ ছয় কোটি ২৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ছাড় করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পৌরসভাগুলো পেয়েছে ২৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, রাউজান পৌরসভা দুই লাখ টাকা করে ১৬ লাখ টাকা পেয়েছে। মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী পৌরসভা এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা করে পেয়েছে আট লাখ ৭৫ হাজার টাকা। নাজিরহাট ও দোহাজারী পৌরসভা এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা করে পেয়েছে দুই লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব ফারজানা মান্নান স্বাক্ষরিত পত্র সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকার জনগণের মাঝে করোনা বিস্তার রোধকল্পে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি ও সুরক্ষার নিমিত্ত মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, অঙিজেন সিলিন্ডার, থার্মাল স্ক্যানার ক্রয়সহ পৌরসভা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে স্থাপিত টিকা বুথ ব্যবস্থাপনার জন্যই ‘কোভিড-১৯ ( করোনা) মোকাবেলা’ উপ-খাতের টাকা ব্যয় করতে হবে।
মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম : ডেঙ্গু মশক নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও প্রচার উপ-খাতে দেশের পৌরসভাগুলোর জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। তৃতীয় কিস্তি বাবদ দেশের পৌরসভাগুলোর অনুকুলে চার কোটি ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা অবমুক্ত করা হয়। চট্টগ্রামের পৌরসভাগুলো পেয়েছে ২২ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, রাউজান পৌরসভা এক লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা করে ১৩ লাখ টাকা পেয়েছে। এছাড়া মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী পৌরসভা এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা করে পেয়েছে ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকা। নাজিরহাট ও দোহাজারী পৌরসভা এক লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়েছে দুই লাখ ৫৭ হাজার টাকা।
এ অর্থ দিয়ে পৌর এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ডেঙ্গু মশক নিধন এবং এর বংশ বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় সরাঞ্জামাদি ক্রয় এবং জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, টিভি স্ক্রলে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ফারজান মান্নান জানান, পৌরসভার মেয়র অথবা প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা সচিব যৌথভাবে মঞ্জুরিকৃত অর্থের আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। ডেঙ্গু মশক নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও প্রচার সামগ্রী ব্যতিত অন্য কোনো কাজে অর্থ ব্যয় করা যাবে না। ছাড়কৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সর্বশেষ সংশোধনীসহ পিপিআর-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
থোক বরাদ্দ : চলতি অর্থ বছরে উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দ খাতের উপ-খাতে পৌরসভাগুলোর জন্য বরাদ্দ আছে ২৩৪ কোটি টাকা ৫০ লাখ। তৃতীয় কিস্তি বাবদ অবমুক্ত করা হয় ৫৮ কোটি টাকা ৬২ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা। চট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভা পেয়েছে দু্‌ই কোটি ৬৫ লাখ টাকা ৭৯ হাজার টাকা।
ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে চট্টগ্রামের পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, রাউজান ১৮ লাখ টাকা করে পেয়েছে এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা। মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি ও বোয়ালখালী পৌরসভা ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছে। এছাড়া নাজিরহাট ও দোহাজারী পৌরসভা ১৭ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা করে ৩৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা পেয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব ফারজানা মান্নান সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র অথবা প্রশাসকদের জানান, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে জারিকৃত পৌরসভা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা যাবে না। বিএমডিএফ এর ঋণের কিস্তিও এ অর্থ দিয়ে পরিশোধ করা যাবে না। পৌর এলাকায় স্যানিটেশন সুবিধা শতভাগ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশে বরাদ্দকৃত অর্থের ২০ শতাংশ স্যানিটেশন প্রকল্প/স্কিম বাস্তবায়নে ব্যয় করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেছে ২৪ রাজনৈতিক দল
পরবর্তী নিবন্ধটেক্সটাইল যন্ত্রপাতির আড়ালে অতিরিক্ত পণ্য আমদানি