টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির আড়ালে অতিরিক্ত পণ্য আমদানি

চট্টগ্রাম কাস্টমস ।। এক প্রতিষ্ঠানকে দেড় কোটি টাকা অর্থদন্ড

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

নরসিংদী সদরের জুয়েল টেক্সটাইল চীন থেকে পুরোনো কাপড় বুননের যন্ত্রের (সেকেন্ড হ্যান্ড লুম মেশিন) ঘোষণায় অতিরিক্ত ৫০ টন থ্রেডেড নাট নিয়ে আসে। ঘোষণা বহির্ভূত এসব পণ্য আমদানির মাধ্যমে আমদাানিকারক ৭৭ লাখ ১৭ হাজার ১০০ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করে। এর আগে পণ্য চালানটি খালাসের জন্য আমদানিকারকের মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্ট সৈকত ট্রেডিং গত বছরের ২৯ আগস্ট বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। যার নম্বর-১৪০৮২৪৮। ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আনার দায়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর (শো-কজ) নোটিশ জারি করে কাস্টমস কর্র্র্র্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের কারণ দর্শানোর জবাব ও শুনানি পর্যালোচনা করে কাস্টমস কর্র্র্তৃপক্ষ ঘোষণা অতিরিক্ত পণ্য আনার মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ পায়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় গত মাসের ৪ জানুয়ারি কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। একই সাথে ফাঁকিকৃত ৭৭ লাখ ১৭ হাজার ১০০ টাকা শুল্কও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার আদেশ দেন। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, জুয়েল টেক্সটাইল নামে আমদানিকৃত চালানটির বিষয়ে গোপন সংবাদ থাকায় কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এইআইআর) শাখা চালানটি লক করে। কিন্তু চালানটি ভারী হওয়ায় কন্টেনার থেকে বের করে কায়িক পরীক্ষা করা এবং পুনরায় কন্টেনারে ঢুকানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই গত ১৪ সেপ্টেম্বর আমদানিকারক একটি আবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে চালানটি স্কটের মাধ্যমে শতভাগ কায়িক পরীক্ষার জন্য আমদানিকারক ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ঘোষণা অতিরিক্ত অথবা ঘোষণা বহির্ভূত এবং অন্য পণ্য পাওয়া গেলে কাস্টমস আইনে যে ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেটি মেনে নেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। তবে কাস্টমসে মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে স্কট করে আমদানিকারকের কারখানা চত্বরে নিয়ে শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় ঘোষিত পণ্যের সাথে ঘোষণা বহির্ভূত ৫০ হাজার কেজি (৫০ টন) নিউ থ্রেডেড নাট পাওয়া যায়। ঘোষণা বহির্ভূত এসব পণ্য খালাস হলে সরকারের ৭৭ লাখ ১৭ হাজার ১০০ টাকা রাজস্ব হানির আশঙ্কা ছিল। এ ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চালানে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য পাওয়ায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার লিখিত জবাব চেয়ে আমদানিকারকের প্রতি নোটিশ জারি করে। পরের মাসের ৯ নভেম্বর আমদানিকারক জবাবে উল্লেখ করেন-‘রপ্তানিকারক ভুলবশত অন্যের পণ্য আমদানিকৃত পণ্যের সাথে প্রেরণ করেছেন, যার বিষয়ে অবগত ছিলাম না’। একই সাথে আমদানিকারক ব্যক্তিগত শুনানি প্রদানের ইচ্ছা পোষণ করেন। পরবর্তীতে কাস্টমসের শুনানিতে আমদানিকারকের প্রতিনিধি রপ্তানিকারক ভুলবশত অন্যের পণ্য আমদানিকারকের বৈধ পণ্যের প্রেরণে করেছে উল্লেখ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ জানান। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকের সকল নথি পর্যালোচনা করে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আমদানির প্রমাণ পেয়ে ১ কোটি ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। একই সাথে অর্থদণ্ডের সাথে ফাঁকিকৃত ৭৭ লাখ ১৭ হাজার ১০০ টাকাও ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার অনুরোধ করেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, মিথ্যা ঘোষণা কিংবা ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য এনে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মিথ্যা ঘোষণার পণ্য চালান ঠেকাতে কাস্টমস কর্তারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মিথ্যা ঘোষণা কিংবা ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আমদানির ঠেকানো সরকারের রাজস্ব আয়ের গতি বৃদ্ধি পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভাকে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬