গতকাল প্রধান নির্বাচকের চেয়ারে বসে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু যখন এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নাম ঘোষণা করছিলেন তখন নিশ্চয়ই তার কন্ঠ বারবার কেঁপে উঠছিল। কারণ চট্টগ্রামের এই সাবেক ক্রিকেটার যে দলে খুঁজে পাচ্ছিলেন না চট্টগ্রামের কোন ক্রিকেটারকে। নান্নু, আকরাম, শহীদ, নোবেলদের নিয়ে একসময় জাতীয় দলে ছিল চট্টগ্রামের ছয়জন ক্রিকেটার। পরবর্তীতে নাফিস, আফতাব, নাজিম, তামিমরা এসে সে জায়গা দখল করেন। এদের পরে আসেন রাব্বি, নাঈম হাসান কিংবা শাহাদাত হোমেন দিপুর মত ক্রিকেটার। কিন্তু কালের প্রবাহে যেখানে চট্টগ্রামের ক্রিকেটার আরো বেশি হওয়ার কথা ছিল সেখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত দুই দশকেরও বেশি সময় পর চট্টগ্রামের কোন ক্রিকেটার ছাড়া গঠিত হলো জাতীয় দল। তাও এশিয়া কাপের মত টুর্নামেন্টের জন্য। দলের শেষ ভরসা তামিম ইকবাল ইনজুরির কারণে খেলছেননা এশিয়া কাপে। ইয়াসির আলি রাব্বি রয়েছেন দলে আসা যাওয়ার মধ্যে। অনেক সুযোগ পেলেও নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান। আর নাঈম হাসানের গায়েতো টেস্ট ক্রিকেটারের ট্রেড মার্ক পড়ে গেছে। তিনিও সে টেস্ট দলেও নাই অনেকদিন। আর যেসব ক্যারিয়ার শুরু করা শাহাদাত হোসেন দিপু পেরে উঠেনি অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে। ফলে এই প্রথম জাতীয় দলে নেই চট্টগ্রামের কোন ক্রিকেটার। যা চট্টগ্রামের ক্রিকেট প্রেমীদের জণ্য সত্যিই হতাশার। একই সাথে যেন ফুটে উঠেছে চট্টগ্রামের ক্রিকেটের দৈন্যতার চিত্র। যদিও আর্থিক দিক থেকে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা দেশের সবচাইতে ধনী ক্রীড়া সংস্থা। বিসিবিতে তিনজন পরিচালক রয়েছে চট্টগ্রামের। বিসিবির প্রধান নির্বাচক চট্টগ্রামের। কিন্তু নেই শুধু ক্রিকেটার।
বিসিবির পরিচালক এবং বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান কদিন আগে বলেছিলেন দেশের ক্রিকেটে অন্যরা এগিয়ে গেলেও আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। আমরা পারছিনা অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায়। আর এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে বেশি বেশি খেলা আয়োজন আর মাঠ তৈরির কোন বিকল্প নেই। আবার শুধু আয়োজনের জন্য খেলা আয়োজন করে লাভ নেই। মান সম্মত খেলা আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় আরো পিছিয়ে পড়ব। আকরাম খান বলেন আমাদেরকে এখন নতুন করে ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে অন্যরা কিন্তু বসে নেই। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে তারাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। একমাত্র চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের সব জেলাতেই মাঠ রয়েছে। ঢাকার মত শহরে যেখানে বিল্ডিং ভেঙ্গে মাঠ সৃষ্টি করা হচ্ছে সেখানে চট্টগ্রামের মাঠ গুলো দখল হয়ে যাচ্ছে খেলা বহির্ভূত কাজে। আর সেটাই ক্রিকেটার বেরিয়ে না আসার প্রধান একটি কারণ। তিনি চট্টগ্রামের খেলার মাঠগুলো পুনরায় উদ্ধার করে খেলার কাজে ব্যবহারের জন্য অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের আরেক দিকপাল যিনি এবং দলের প্রধান নির্বাচক সেই মিনহাজুল আবেদীন নান্নু চরমভাবে হতাশ এবারের এশিয়া কাপের দলে চট্টগ্রামের কোন ক্রিকেটার না থাকায়। তিনি বলেন এটা আমার জন্য সত্যিই কষ্টের। কারন আমরা এই জেলার হয়ে খেলেছি। আমরা যখন খেলেছি তখন অনেক খেলা হতো। শুধু খেলা নয়। মান সম্মত খেলা হতো। এক আউটার স্টেডিয়ামেই হতো অনেক টুর্নামেন্ট। কিন্তু সেই আউটার স্টেডিয়াম এখন হারিয়ে গেছে।
তিনি বলেন ক্রিকেটার সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বয়স ভিত্তিক দল থেকে উপরের দিকে কোন ক্রিকেটার সাপ্লাই দিতে পারছেনা চট্টগ্রাম। একটি এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের বালির মাঠে খেলে ক্রিকেটার হওয়া সম্ভব নয়। মুখে বলা আর বাস্তবে করে দেখানোর মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। তাই চট্টগ্রামকে নতুন করে ভাবতে হবে কিভাবে ক্রিকেটার সৃষ্টি করা যায়। তামিম ইনজুরিতে। রাব্বিকে অনেক সুযোগ দেওয়ার পরও সে সুযোগকে কাজে লাগাতে পারছেন না তিনি। ফলে দলে স্থায়ী হতে পারছেন না। তরুণ দিপু কেবলই দলে ঢুকেছে। তবে ক্রিকেটার তৈরি করতে হবে নিচে থেকে। বিশেষ করে বয়স ভিত্তিক আয়োজন থেকে ক্রিকেটার বের করতে হবে চট্টগ্রামকে। না হয় দিন দিন আরো পিছিয়ে যাবো আমরা।