করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আর হচ্ছে না। গতকাল বুধবার দুপুরে এমন ঘোষণা জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের ফলে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ফরম পূরণ করা শতভাগ শিক্ষার্থীই পাস করবে এবার। অকৃতকার্য হওয়ার সুযোগ থাকছে না একজন শিক্ষার্থীরও। অর্থাৎ এবার পাসের হার শতভাগ। তবে পরীক্ষার্থীর ফলাফল কী হবে সেটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে।
পরীক্ষার্থীদের ফলাফল মূল্যায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী আরো বলেন, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ওই কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন। কমিটি ফলাফল মূল্যায়নের কাজটি করবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই মূল্যায়নের কাজটি শেষ করা হবে বলে।
চট্টগ্রামের ৯৭ হাজার ৯০৫ পরীক্ষার্থীর সবাই পাস : চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, এবার চট্টগ্রামে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯৭ হাজার ৯০৫ জন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শতভাগ পরীক্ষার্থীই এবার পাস করবে। একজনও অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা নেই। যদিও শিক্ষার্থীর ফলাফল নির্ধারণ হবে তার জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের গড়ের ভিত্তিতে।
শিক্ষাবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী- এবার চট্টগ্রামে ৯৭ হাজার ৯০৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৪৭ হাজার ৮৮৭ জন আর ছাত্রী সংখ্যা ৫০ হাজার ১৮ জন। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৯ হাজার ২০১ জন। অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ হাজার ২৯০ জন। এছাড়াও মানোন্নয়নে ২ হাজার ২৩৯ জন এবং ১৭৫ জন প্রাইভেট পরীক্ষার্থী রয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে। মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২২ হাজার ২২ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩৭ হাজার ১২৫ জন ও মানবিক বিভাগ থেকে ৩৮ হাজার ৭৫০ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।
গত ১ এপ্রিল এসব শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। যার কারণে এইচএসসি পরীক্ষায় আর বসা হয়নি পরীক্ষার্থীদের।
বোর্ড সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে- বোর্ডের অধীন মোট ২৭৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা শিক্ষার্থীদের। চট্টগ্রামের ৫ জেলায় (চট্টগ্রাম, কঙবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) মোট ১০৭টি পরীক্ষা কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
একজনও ফেল করবে না এবার : প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও এবার একজন শিক্ষার্থীরও অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা থাকছে না। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়- ২০১৬ সালে ৮৭ হাজার ৪৬৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৪.৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। হিসেবে আরো ৩৫.৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। ২০১৭ সালে পাশ করে ৬১.০৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। আরো ৩৮.৪০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেনি। ওই বছর (২০১৭ সালে) পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ১৯৩ জন। ২০১৮ সালে ৯৭ হাজার ৬৮৪ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে ৬২.৭৩ শতাংশ পাস করে। অকৃতকার্য হয় আরো ৩৭.২৭ শতাংশ। একই ভাবে গতবার (২০১৯ সালে) ৩৭.৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি। ৯৯ হাজার ৬৫১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬২.১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে গতবার। তবে এবার পরীক্ষার্থীদের শতভাগ পাস করানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় একজন শিক্ষার্থীও অকৃতকার্য হচ্ছে না। যা পরীক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ বলে মনে করছেন অনেকে। তবে সিদ্ধান্তটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী-অভিভাবক মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে নিলেও নেতিবাচক দৃষ্টিতেও দেখছেন কেউ কেউ।