চট্টগ্রামে এখনো কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি বেসকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৪৮ জন রোগী। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৭৮ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৬ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৭ জন, চট্টগ্রাম সিএমইচ হাসপতালে ১১ জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬ জন এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরো ২০ জন। অন্যদিকে গতকাল নতুন করে ৪৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া মোহাম্মদ হামিদ নামের ১৩ বছরের এক কিশোর মারা গেছেন। কক্সবাজারের বাসিন্দা হামিদ গত ১২ অক্টোবর চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতায় গত বুধবার মারা যান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। এর মধ্যে ১২ জন নারী, ৪ পুরুষ ও তিনজন শিশু রয়েছে। এছাড়া সবমিলিয়ে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮৬ জনে। নগরীতে আক্রান্ত ১ হাজার ৪৩৩ জন এবং উপজেলা ৮৫৩ জন। অপরদিকে সারাদেশে একদিনে ১১শ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নগরীর অনেক বাসা বাড়ির ছাদে ও পরিত্যক্ত জায়গা ও বস্তুতে জমে থাকা পানির এডিস মশার লার্ভা দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সংশ্লিষ্টরা অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে এর আগে ডেঙ্গু ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে নগরীর ২৩টি এলাকাকে চারটি জোনে ভাগ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে সাতটি এলাকাকে অতিঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। দেরিতে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া এবং রোগীকে দেরিতে হাসপাতালে আনার কারণে অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। জ্বরের প্রথম তিনদিনের মধ্যে ডেঙ্গুর (এনএসওয়ান) পরীক্ষা করাতে হবে। এরপর ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে বাসায় পূর্ণ বিশ্রামে থেকে তরল জাতীয় খাবার (জুস, ডাবের পানি, স্যালাইন, স্যুপ) বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। জ্বরের জন্য শুধু সাধারণ প্যারাসিটামল খাবে। কোনো ধরনের এন্টিবায়েটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নাই। তবে জ্বর কমার পরের সময়টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়টাতে অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি, পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লালচে দাগ বা র্যাশ, প্রস্রাব পায়খানায় বা অন্য কোনোভাবে রক্ত দেখা গেলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। তবে অনেকে রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) পরীক্ষায় প্লাটিলেট কমে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্লাটিলেট কমলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্লাটিলেট কমলে রক্তক্ষরণ হবে এটি ঠিক নয়। এছাড়া ডেঙ্গুর চিকিৎসায় প্লাটিলেট কমে গেলে তাকে প্লাটিলেট দিতে হবে এটিও গাইডলাইনে নেই। চিকিৎসাটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রক্তক্ষরণ হয় না। আবার অনেকের প্লাটিলেট কাউন্ট বেশি থাকলেও রক্তক্ষরণ হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে মোট ৭৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। তবে রোগীর চাপ নেই। ডেঙ্গু মোকাবেলায় হাসপাতালে সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের এখানে ৫৪ শয্যার বিশেষায়িত ওয়ার্ড ছাড়াও তিনটি মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্নার রাখা হয়েছে। সেখানেও ভর্তি দেয়া হচ্ছ।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের সবগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ডেঙ্গুর রোগীদের পর্যাপ্ত স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ রয়েছে। আমরা রোগীদের সুচিকিৎসা দিতে বদ্ধপরিকর। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকল রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে।