চট্টগ্রামে আঘাত হানেনি মিধিলি

আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা, পাহাড় ধসের শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ চট্টগ্রামে সরাসরি আঘাত হানেনি। গতকাল বেলা ১টার দিকে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলাপায়রা উপকূল পেরিয়ে পুরোপুরি স্থলভাবে উঠে আসে। বিকেল ৩টার দিকে এটি দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। ঝড়ের বিপদ কমে আসায় চট্টগ্রামকক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া অফিস। অবশ্য মিধিলির প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার দিনভর থেমে থেমে মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণ হয়েছে নগরে। এতে তলিয়ে যায় শহরের নিচু এলাকা। কয়েকটি এলাকায় বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া মিধিলির প্রভাবে নগরে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

গত রাত সাড়ে ৮টায় ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদস্থ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর আজাদীকে বলেন, নগরে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। শহরের কোথাও গাছপালা ভেঙে পড়ে সড়কে যান চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটেনি। এদিকে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও দুর্যোগ হতে পারে এমন সম্ভাবনা থেকে নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও জেলা প্রশাসন। খোলা হয় আশ্রয়কেন্দ্র। খোলা হয় কন্ট্রোল রুম। পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে করা হয় মাইকিং।

পতেঙ্গা তীরে উঠে আসে জাহাজ : প্রবল বাতাসে গতকাল সন্ধ্যার একটু আগে পতেঙ্গা ওয়েস্ট পয়েন্ট এলাকায় নোঙর ছিঁড়ে একটি লাইটারেজ জাহাজ তীরে উঠে আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করে পতেঙ্গা থানার ওসি কবিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রবল বাতাসের কারণে জাহাজটি ওয়েস্ট পয়েন্টের কাছে তীরের দিকে চলে আসে এবং সেখানে আটকে যায়।

ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নিচু এলাকা : গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নগরে ৭৯ মিলিমিটার, সন্দ্বীপে ৯৮ মিলিমিটার ও সীতাকুণ্ডে ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নগরে ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এদিকে বৃষ্টিতে নগরের নিচু এলাকা গোড়ালি থেকে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। দুপুরে বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েন জুমার নামাজের মুসল্লিরা।

জানা গেছে, বাদুরতলা থেকে কাপাসগোলা পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় গোড়ালি থেকে গোড়ালির কিছুটা ওপরে পর্যন্ত পানি উঠেছে। এছাড়া বহদ্দারহাট, বাড়ইপাড়া, খড়মপাড়া, খাজা রোড, বাকলিয়া, রাহাত্তারপুল, চকবাজার, ঘাসিয়াপাড়া, ডিসি রোড, খতিবের হাটে পানি উঠে বলে জানায় স্থানীয়রা।

চকবাজার মুহাম্মদ আলি শাহ দরগাহ লেন এলাকার বাসিন্দা আবদুল হামিদ আজাদীকে জানান, আবদুল লতিফ বাই লেন, ডি সি রোড, কে বি আমান আলী রোড, ফুলতলা থেকে আতুরার দোকান পর্যন্ত, সৈয়দ শাহ রোড, চকবাজার আধুনিক চক সুপার মার্কেটের পূর্ব দিকের রাস্তায় পানি উঠেছে। রাত ৮টায়ও পানি নামেনি। মুহাম্মদ আলি শাহ দরগাহ লেনে তার বড় চাচার রান্নাঘরেও পানি ঢুকেছে উল্লেখ করে বলেন, বর্ষা মৌসুমের মত পানি হয়েছে। খড়মপাড়া এলাকার বাসিন্দা নোমান বলেন, সমপ্রসারণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হয়নি। নালাগুলো বন্ধ, তাই পানি সরেনি, রাস্তায় জমে আছে।

আজ বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা : ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে আজ নগরে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে হতে পারে পাহাড় ধসও। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারেক জানান, আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘাচ্ছন্নসহ অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সাথে কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।

চসিক ও জেলা প্রশাসনের মাইকিং : ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা থাকায় নগরের বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল মাইকিং করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এছাড়া দামপাড়ায় জরুরি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতেই ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিজনিজ ওয়ার্ডের ঝুঁকিপূর্র্ণ এলাকায় অবস্থানরত জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে তদারক করতে নির্দেশ দিয়েছি। চসিকের সবগুলো বিভাগ দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সক্রিয় আছে। এছাড়াও মাইকিংসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে জনসাধারণকে সরিয়ে নিতে রেড ক্রিসেন্টও সহযোগিতা করছে। এদিকে আকবর শাহ এক নম্বর, দুই নম্বর ও তিন নম্বর ঝিল ও বিজয়নগরে নিরাপদে আশ্রয় নিতে মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন।

মিধিলির সর্বশেষ অবস্থা : আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে (১১) বলা হয়, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ বিকাল ০৩ টায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে এবং দুর্বল হয়ে পটুয়াখালী ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের অভ্যন্তরে আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বকাপের পর্দা নামছে কাল
পরবর্তী নিবন্ধ৫৮ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়