পূর্ব–মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম–মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয়েছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে অগ্রভাগ আজ রোববার দুপুরের পর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে এবং সন্ধ্যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র বাংলাদেশ অতিক্রম করে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গত রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখাকালীন ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভাব্য গতিপথ ছিল পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। অর্থাৎ সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মাঝ দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম–কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় জেলায় জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল সৃষ্টি হওয়ার পর গত রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক–৮) পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের পণ্য খালাস কার্যক্রম। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে নগরে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানলে সম্ভাব্য ক্ষয়–ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রামে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার পাশাপাশি মাইকিং করে সতর্ক করা হয়।
জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বৃষ্টি হতে পারে : আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩–৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪–৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে।
রেমাল রূপ নিতে পারে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে : আবুল কালাম মল্লিক গণমাধ্যমকে জানান, আজ বিকাল তিনটার পর থেকে উপকূলে আঘাত হানা শুরু করতে পারে রেমাল। এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে আঘাত হানতে পারে উপকূলে। ঘূর্ণিঝড়টি ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার গতিতে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার শঙ্কা নেই।
আবহাওয়াদিরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি সর্বপ্রথম যেখানে আঘাত হানবে সেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০–১৩০ কিলোমিটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতিবেগ ১১৯ কিলোমিটার হলে সেটিকে সিভিয়ার সাইক্লোন বা প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। এর বেশি হলে ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। অর্থাৎ রেমাল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, রেমাল আজ সকালে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এবং তা মধ্যরাতে আছড়ে পড়বে স্থলভাগে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতি থাকবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। সাময়িকভাবে গতি বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাতের আশঙ্কাই বেশি। তবে এর বড় অংশই বাংলাদেশের উপকূলের উপর দিয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের বেশিরভাগ অংশ বাংলাদেশ পাবে। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ৩০ ভাগ যদি ভারত পায়, বাংলাদেশ পাবে ৭০ ভাগ।
কত দূরে রেমাল : গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।