গিওর্গি লুকাস – হাঙ্গেরীয় দার্শনিক ও সাহিত্য সমালোচক। মার্কসীয় চিন্তাবিদ হিসেবে বিশ শতকের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে তিনি কিছুটা বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। মূলত লেখক ও চিন্তাবিদ হিসেবে সুপরিচিত লুকাস বিশ শতকের প্রথম দশকে আধুনিক নাটক ও নান্দনিক সংস্কৃতি নিয়েও অধ্যয়ন করেন।
গিওর্গি লুকাসের জন্ম হাঙ্গেরিতে ১৮৮৫ সালের ১৩ই এপ্রিল। প্রথমদিকে বলশেভিকদের সমালোচনা করলেও পরবর্তীসময়ে তিনি হাঙ্গেরিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। ১৯১৯ সালে হাঙ্গেরীয় কমিউনিস্ট অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে লুকাস চলে যান জার্মানিতে। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত বসবাস করেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হাঙ্গেরিতে ফিরে আসেন। ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরি সোভিয়েত ইউনিয়নের আধিপত্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে লুকাস স্বল্পস্থায়ী বিপ্লবী সরকারে যোগ দেন। লুকাস প্রচুর লিখতেন। ১৯৩০-এর দশকে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস’। এতে তিনি সাহিত্যে ঐতিহাসিক সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেন। লুকাস জেমস জয়েস ও ফ্রানৎস কাফকার আধুনিকতার সমালোচনা করেন এবং একে অবক্ষয়ী বলে অভিমত দেন। বালজাক ও টমাস মান নিয়ে তাঁর অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা রয়েছে।
মহামনীষী কার্ল মার্কসের তত্ত্বের কেন্দ্রিভূত বিষয় হিসেবে লুকাস ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’কে নতুন গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করেন। কার্ল মার্কস ছাড়াও তাঁর লেখায় সমাজতাত্ত্বিক ম্যাঙ ওয়েবারের প্রভাব রয়েছে। লুকাস রচিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে : ‘ইতিহাস ও শ্রেণিবিবেচনা’, ‘উপন্যাসের তত্ত্ব’ প্রভৃতি। ১৯৭১ সালের ৬ই জুন লুকাস প্রয়াত হন। বিশ শতকের অন্যতম মননশীল ব্যক্তি হিসেবে বিদ্যাচর্চার জগতে তিনি সুপরিচিত।