অধিকৃত গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ২৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬ জন। সবাইকে স্থানান্তরিত হতে বলেছিল ইসরায়েল। গাজায় হামাস পরিচালিত সরকারি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন গতকাল এ খবর জানিয়েছে। গাজায় হামাস পরিচালিত সরকারের দফতর শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সারি লম্বা হয়েছে। চার হাজার ৩৮৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে এক হাজার ৭৫৬ শিশু ও ৯৬৭ নারী রয়েছেন। ১৩ হাজার ৫৬১ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। উভয় পক্ষের কর্তৃপক্ষের মতে, ২১ অক্টোবর পর্যন্ত হামাসের হামলায় এক হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন চার হাজার ৩৮৫ জন। বৃহস্পতিবার বিকালে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ৭ অক্টোবর ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাতের পূর্বে ইসরায়েলের কারাগারে পাঁচ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দি ছিল। এখন বন্দি সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজারের বেশি হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, এখন পর্যন্ত গাজার ১৪ লাখের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত ১৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন। গাজায় মোট জনসংখ্যার পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা বিমান হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চল ও এর পার্শ্ববর্তী এলকাগুলো প্রায় মাটির সাথে মিশে গেছে। অধিকাংশ ভবন ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় জাতিসংঘের স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে আশ্রয়ও নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তবে সেসব হাসপাতালও এখন খালি করতে বলা হচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, গাজার উত্তরের আল কুদস হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হাসপাতালে বর্তমানে ৪০০ রোগী এবং ১২ হাজার বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আমির–আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ না থামালে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। ইসরায়েলকে সামরিক সমর্থন দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেও দোষারোপ করেছেন আব্দুল্লাহিয়ান। ইরান গাজার হামাস এবং লেবাননের গেরিলা দল হিজবুল্লাহ উভয়কেই সমর্থন দিয়ে আসছে। হিজবুল্লাহ এরই মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বলে ঘোষণা দিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহিয়ান গতকাল রোববার তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের প্রঙি ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলছি, তারা যদি অবিলম্বে গাজায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যা বন্ধ না করে, তাহলে যে কোনও সময়েই যে কোনও কিছু হওয়া সম্ভব। আর আঞ্চলিক পরিস্থিতি তখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’ তিনি বলেন, পরিণতি হতে পারে ‘গুরুতর, তিক্ত’ এবং এর প্রভাব আঞ্চলিক দিক দিয়ে এমনকী যুদ্ধকে যারা সমর্থন দিচ্ছে, তাদের জন্যও হতে পারে ‘সুদূরপ্রসারী।’ ইসরায়েলকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সমর্থনই প্রমাণ করে যে, গাজায় চলমান যুদ্ধ একটি ছায়া যুদ্ধ (প্রঙি ওয়ার); যা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চালাচ্ছে ইসরায়েল।’
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারাও হামাস–ইসরায়েল সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে আসছেন। তবে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে ইরানের সতর্কবার্তা আসার কয়েকঘণ্টা পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উত্তর ইসরায়েলের লেবানন সীমান্তে সেনাদের উদ্দেশে এক বার্তায় বলেছেন, তার মানুষেরা নিজেদের জীবনের জন্য লড়াই করছে, দেশের জন্য লড়ছে, এটি কোনও বাড়াবাড়ি নয়। এটি যুদ্ধ এবং হামাসের বিরুদ্ধে তাদের এই যুদ্ধ মরণপণ লড়াই।
এদিকে গাজায় পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ায় সেখানে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থা। জাতিসংঘের পাঁচটি সংস্থার মধ্যে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এক যৌথ বিবৃতিতে গাজার পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’ বলে বর্ণনা করেছে। বিবিসি জানায়, এই দুই সংস্থার পাশাপাশি জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এবং আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিলও (ইউনিসেফ) বিবৃতি দিয়েছে। এতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সংস্থাগুলো বলেছে, গাজায় অবিলম্বে এবং অবাধে মানবিক ত্রাণকাজের জন্য প্রবেশ করতে দেওয়া জরুরি। যাতে ত্রাণকর্মীরা সাধারণ মানুষের প্রয়োজন মেটাতে তাদের কাছে পৌঁছতে পারে। গাজার ১৬ লাখেরও বেশি মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন বলে জানায় তারা। খবর বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার।