ক্যাপ্টেন ও তিন নাবিকসহ ৫ জনের লাশ উদ্ধার

কর্ণফুলীতে জাহাজডুবি, এখনো নিখোঁজ ২

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২২ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ডুবে যাওয়া এফভি মাগফেরাত জাহাজটির ক্যাপ্টেন ও তিন নাবিকসহ মোট পাঁচজনের লাশ কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভেসে ওঠে। গতকাল কোস্টগার্ড এবং নৌ-পুলিশ দল ভাসমান মরদেহগুলো উদ্ধারের পর আত্মীয়স্বজনেরা শনাক্ত করেন। পরে বিকেলেই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। গতরাত পর্যন্ত আরো দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে কর্ণফুলী নদীর সি-রিসোর্সেস ডকইয়ার্ড ঘাটে প্রপেলার (পাখা) খুলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নদীর ২ নম্বর বয়ার সঙ্গে ধাক্কা লেগে জাহাজটি ডুবে যায়। জাহাজটির সর্বমোট ২০জন নাবিকের মধ্যে ১৪ জন সাঁতরে এবং অন্য নৌকার সহায়তায় কূলে উঠতে সক্ষম হলেও ৭ জন নিখোঁজ হন। ঘটনার পর থেকে কোস্ট গার্ড এবং নৌ পুলিশ উদ্ধার অভিযান শুরু করে। কোস্ট গার্ডের ৫ সদস্যের একটি ডুবুরীদল নদীতে ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়। উদ্ধার অভিযান চলাকালে গতকাল সকালে নেভাল বার্থ ৬ এর কাছাকাছি একটি লাশ, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ড্রাইডকের বিপরীত পাশ থেকে একটি লাশ, ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ মেরিন একাডেমির সামনে ভাসমান অবস্থায় একটি লাশ, বিকেল পৌঁনে তিনটা নাগাদ সদরঘাট এলাকা সংলগ্ন নদী থেকে একটি লাশ এবং বিকেল সাড়ে তিনটায় পতেঙ্গা এলাকা থেকে একটি লাশ মিলে সর্বমোট পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় নিখোঁজ ৭ জনের মধ্যে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হলেও আরো দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানালেন নৌ পুলিশ সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, নিখোঁজ দু’জনের একজন হচ্ছেন প্রদীপ বাবু। তিনি জাহাজটির গীজারম্যান ছিলেন। তার বাড়ি হাটহাজারী। অপরজন নাবিক মোহাম্মদ রাকিবের বাবা। তিনি পুত্রের জাহাজে বেড়াতে এসেছিলেন। রাকিব সাঁতরে কূলে উঠতে সক্ষম হলেও ঘুমে থাকায় তার পিতার কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি।
ওসি মোহাম্মদ আকরাম হোসেন জানান, উদ্ধারকৃত পাঁচটি মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন এফভি মাগফেরাত জাহাজের ক্যাপ্টেন ফারুক বিন আবদুল্লাহ, চিফ মাস্টার জহির উদ্দিন, চিফ ম্যানেজার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম এবং ডক ইয়ার্ডের কর্মচারী মোহাম্মদ রহমত।
ক্যাপ্টেন ফারুক বিন আবদুল্লাহ লালখান বাজারের বাসিন্দা, চিফ মাস্টার জহির উদ্দিনের বাড়ি হাতিয়া, চিফ ম্যানেজার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহ হলেও তিনি বসবাস করেন নগরীর হালিশহরে। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার জহিরুল ইসলামের বাড়ি সন্দ্বীপে। ডক কর্মচীরা রহমতের বাড়ি কর্ণফুলীর ইছানগরে। গতকালই তাদের লাশ স্বজনদের কাছে
হস্তান্তর করা হয়েছে।
পটিয়া প্রতিনিধি জানান, জাহাজডুবির ঘটনাস্থলে দিনভর ভিড় করেছেন নিখোঁজদের স্বজন ও স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিখোঁজ ফিশিং মাস্টার হাতিয়ার বাসিন্দা জহিরুল ইসলামের (৩৫) ছেলে রাকিবুল হাসান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের জহিরুলের ছবি নিয়ে নদীর পাড়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
অন্যদিকে ডকইয়ার্ড সদস্য মো. রহমতের মরদেহ উদ্ধারের খবরে শোকের মাতম দেখা গেছে কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর গ্রামে। বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন রহমতের স্ত্রী রং বানু, তার মা সাইরা খাতুন ও ভাই ইসমত আলী। রহমত উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রামের মুন্সি মিয়ার ছেলে।
কোস্ট গার্ডের পক্ষে উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেন লেঃ কমান্ডার বি এম তানজিমুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ফিশিং জাহাজ দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করতে নিবন্ধনকারী সংস্থা নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাইকারিতে বিদ্যুতের দাম আগের মতই থাকছে
পরবর্তী নিবন্ধপলোগ্রাউন্ডে মাঝে মাঝে ভ্যারাইটি শো হতো, তার চেয়ে একটু বেশি লোক হয়েছে