করোনায় পোল্ট্রি শিল্পে ধস

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ জুন, ২০২১ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

করোনার ধাক্কায় ধস নেমেছে পোল্ট্রি শিল্পে। করোনাকালীন কয়েক দফার লকডাউনে বিয়ে বা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান একেবারে কমে গেছে। যা হচ্ছে তাও সীমিত পরিসরে। ফলে মুরগির বাজারে চাহিদাও আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এর প্রভাবে গত ছয় মাসে দুইশতাধিক লেয়ার ও ব্রয়লার খামার গুটিয়ে নিয়েছেন খামারিরা। সামাজিক অনুষ্ঠানে মূলত ব্রয়লার মুরগির খুব বেশি চাহিদা থাকে। পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা শুরুর পর থেকে খামারিরা ক্রমাগত লোকসান দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া চাহিদা না থাকার কারণে বাজারে মুরগির দামও কম। অন্যদিকে মুরগির খাদ্যের দাম এক মাসের ব্যবধানে বস্তায় ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও মুরগির বাচ্চার দাম ১৫-২০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে খামারের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক খামারি শেডে মুরগির বাচ্চা তুলতে আগ্রহী হচ্ছেন না। জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, করোনায় অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম জেলায় ধাপে ধাপে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার খামারিকে নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রণোদনা পেয়েছেন দেড় হাজার খামারি। জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলায় নিবন্ধিত লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে চারশতাধিক। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এরমধ্যে অনিবন্ধিত খামার রয়েছে হাজারেরও অধিক। করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক ছোট ও মাঝারিমানের খামারি প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলা ও নগরীতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ৩৬৫ জন খামারিকে ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে এক হাজার ৫৬২ জন খামারি প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। যাচাই বাছাইয়ের তালিকায় সংযোজন কিংবা বিয়োজন হতে পারে। অন্যদিকে করোনা শুরুর আগে থেকেই দেশের পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ কমছে। বর্তমানে আমাদের দেশে সাতটি বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে পাঁচটি ভারতের, একটি থাইল্যান্ডের এবং একটি চীনের। ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে ভিএইচ গ্রুপ, গোদরেজ, সগুনা, টাটা এবং অমৃত গ্রুপ। এছাড়া আছে থাইল্যান্ডের সিপি এবং চীনের নিউহোপ।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামার আছে। ব্রয়লার মুরগির মাংসের বার্ষিক উৎপাদন ২০১৬ সালে ছিল ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৭ সালে ৫ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৮ সালে ছিল ৫ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। গত ২০১৯ সালে সেটি দাঁড়ায় ৫ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টনে। এছাড়া গত ২০২০ সালে ছিল সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী।
জানতে চাইলে বাকলিয়া এলাকার আফসা পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী একরামুল করিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। এই খারাপের মধ্যে আবার মুরগির খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। এক মাস আগে খাদ্যের বস্তা কিনতাম ২ হাজার ২৫০ টাকায়। এখন সেই বস্তা কিনতে হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। এরমধ্যে গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় মুরগির বাজার চাহিদা কমে গেছে। চাহিদা কমার কারণে আমি গত কিছুদিন আগে ২ হাজার মুরগির বাচ্চা তুলেছিলাম। অবস্থা ভালো থাকলে আমি এক হাজার বাচ্চা বেশি তুলতাম। আমার আশপাশের অনেক খামারি টিকতে না পেরে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। জেলা প্রাণী সম্পদ থেকে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে শুনেছিলাম, কিছুদিন আগে আমার খামারে অডিটও হয়েছে। তবে আমি এখনো কোনো ধরণের প্রণোদনা পাইনি।
তাহিয়া পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হোসেন জাবেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনায় আমরা একদম পথে বসার অবস্থা। মুরগির খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং মুরগির বাজার দর কমে যাওয়ায় গত ছয় মাস ধরেই লোকসান দিয়ে যাচ্ছি। জানি না এই পরিস্থিতির কখন উন্নতি হবে। এখন আবার করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। সব কিছু নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনা মহামারীর প্রভাবে অনেক ছোট ও মাঝারিমানের খামারি বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে বড় খামারগুলোর জন্য আমি মনে করি এটি ভালো দিক। ছোট ও মাঝারিমানের খামারিরা চলে গেলে বড় খামারিরা পরিকল্পনা করে এগোতে পারবেন। আমরা বড় বাণিজ্যিক খামারকে উৎসাহিত করছি। বড় উদ্যোক্তারা খারাপ পরিস্থিতিতেও ব্যবসা চালিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা রাখেন। এছাড়া তারা পরিকল্পিতভাবে মুরগি প্রতিপালন করেন। আমরা পুরো চট্টগ্রাম জেলার ৪ হাজার ৩৬৫ খামারকে নগদ প্রণোদনা দেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করেছি। এরমধ্যে আরো সংযোজন ও বিয়োজন হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় পুত্রবধূর ছুরিকাঘাতে আহত শাশুড়ির মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআড়াই মাস পর খুলেছে কক্সবাজারের হোটেল