বৈশ্বিক মহামারি অদৃশ্য ভাইরাস করোনার কবলে পড়ে লাখো বনি আদমের প্রাণ সংহার হয়েছে পৃথিবীময়। সর্বাধিক মৃত্যু ঘটেছে বিশ্বের শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ আমেরিকা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। মহাশক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আসা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ও আণুবিক্ষণিক করোনা ভাইরাসের দাপটের কাছে বিশ্বের শক্তিশালী দেশও হার মানিয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এটি শুধুমাত্র তাঁর বান্দাদের জন্যে ংড়ভঃ ৎবসরহফবৎ। পৃথিবীর অবাধ্য জনগোষ্ঠীকে মহান আরশে আসীন আমার আল্লাহতায়ালা মাঝে মাঝে এভাবে ংড়ভঃ ৎবসরহফবৎ দিয়ে থাকেন- এটি ঈমানদার ব্যক্তিদের জন্য একটি সুসংবাদও বটে। কেননা আল্লাহতায়ালা তাঁর নেক বান্দাদের ঈমান তাজা করার জন্য এভাবে মাঝে মাঝে পরীক্ষা নিয়ে থাকেন- যা তিনি তাঁর সত্য কিতাবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো, (কখনো) ভয়-ভীতি, (কখনো) ক্ষুধা-অনাহার, (কখনো বা) জান-মাল ও ফসলাদির ক্ষতিসাধন করে তোমাদের পরীক্ষা করা হবে, যারা ধৈর্যের সাথে এর মোকাবেলা করে); তুমি (সে) ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করো’- সূরা আল্ বাকারা- ১৫৫। গত বছরের ৮ মার্চ আমাদের এদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ সনাক্ত হয়েছিল- যা এদেশের মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল। সর্বত্র ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা- কোন হাসপাতালে সীট খালি নেই, চারদিক আর্তনাদ আর হাহাকার, লাশের গন্ধে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের বাতাস যেন বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তের কথা চট্টগ্রামবাসী কখনো ভুলেনি এবং ভুলবেও না। চারদিক লকডাউন- কারফিউ জারি- চতুর্দিক নজরদারি – এ যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোন দেশের অবস্থান। ধীরে ধীরে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়াতে আবার বেপরোয়া হয়ে উঠে আমজনতা। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে দিনে দিনে সংক্রমণের মাত্রা বেড়েই চলেছে, সাথে মৃত্যুর হারও । ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অসচেতন নাগরিকদের জরিমানা করা হচ্ছে, এরপরও যেন অবাধ্য জনগণ প্রশাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সর্বত্র- যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন বালাই নেই। এভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি হওয়ার পথকে সুগম করে দিচ্ছে আমজনতা। আমি মনে করি, করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর যে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছিল তার স্থায়িত্ব বেশিদিন টিকেনি। এখন চলছে করোনার ভয়ংকর তৃতীয় ঢেউ। আমার পর্যবেক্ষণে পৃথিবীসহ বাংলাদেশের মানুষ করোনার এই চোখরাঙানিকে যেন পাত্তা দিচ্ছে না। অশ্লীলতা আর বেহায়াপনার জোয়ারে ভেসে চলছে দুনিয়ার মানুষ। অহমিকা আর দাম্ভিকতার পোশাক পরিধান করে হেঁটে চলছে অশ্লীল মহড়া, হত্যা- খুন- ধর্ষণ-ছিনতাই-ডাকাতি-চাঁদাবাজি-দখলদারিত্ব-কিশোর গ্যাংদের দৌরাত্ন্য– এসব কিছু চলছে অবাধে আর আমার আল্লাহতায়ালা আরশ থেকে তা পর্যবেক্ষণ করছেন। করোনার ভয়ে তটস্থ হয়ে আল্লাহতায়ালার একত্ববাদ ও একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার আকাংখা বুকে নিয়ে সব মানুষ একাকার হয়ে উঠেছিলাম। এখন যেন যে তিমিরে, সেই তিমিরেই। অর্থাৎ করোনা কি আমাদের পরিশুদ্ধ করতে পারেনি এখনো? নৈতিক স্খলন থেকে দূরে সরে রাখতে পারেনি কি এখনো? আমরা আল্লাহর কিতাবকে অস্বীকার করে চলছি সেই আবহমানকাল থেকেই, দ্বীনের আওয়াজকে বুলন্দ করতে যেন ভয় পাই অথচ সেই মহাশক্তিমান আল্লাহর কাছে আমাদের একদিন ফিরে যেতে হবে, ‘যখন তাদের ওপর (কোনো) বিপদ আপদ আসে তখন যারা বলে, নিসন্দেহে আমরা আল্লাহতায়ালার জন্যে, অবশ্যই আমরা (একদিন) তাঁর কাছে ফিরে যাবো’- সূরা আল্ বাকারা- ১৫৬। আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করার কারণে, তাঁর প্রেরিত পয়গম্বরদের আহ্বানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার কারণে যুগে যুগে অনেক জাতি ধ্বংস হয়েছে আর সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে আমাদের এই বিশাল পৃথিবীর মানুষদের অবস্থান, ‘অথচ তোমরা তাদের (পরিত্যক্ত) বাসভূমিতেই বাস করতে, যারা (তোমাদের আগে) নিজেদের ওপর নিজেরা যুলুম করেছিলো এবং (এ কারণে) আমি তাদের প্রতি কি ধরনের আচরণ করেছিলাম তাও তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট ছিলো, তোমাদের জন্যে আমি তাদের দৃষ্টান্তও (বারবার) উপস্থাপন করেছিলাম’- সূরা ইব্রাহীম- ৪৫। করোনা নামক অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে পুরো পৃথিবী যখন অসহায় তখন নৈরাজ্য আর অশ্লীলতার পসরা সাজিয়ে বসেছে আল্লাহর সত্য দ্বীনের বিরোধীতাকারী অবাধ্য মানুষেরা আর এতেই প্রচন্ডভাবে রুষ্ট হন আল্লাহতায়ালা, ‘তিনি অসীম ক্ষমতার মালিক, তিনি চরম প্রতিশোধ গ্রহণকারীও বটে’- সূরা আল ইমরান – ৪। এখন পৃথিবীর অনেক দেশেই চলছে তৃতীয় বারের মতন লকডাউন, কারফিউ আর নজরদারি- অবশ্য এতে কোন লাভ হবে না কস্মিনকালেও, কারণ যারা আল্লাহতায়ালার আয়াতকে অস্বীকার করেছে, আল্লাহর দ্বীনকে সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন করাতে পারেনি তারাই হবে পরকালে নিগৃহীত ও নিকৃষ্ট আর তারাই জলন্ত অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ করবে, ‘(সে মহা বিপদে) কিছু লোকের চেহারা হবে নিম্নগামী, (হবে) ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত তারা (সেদিন) ঝলসে যাওয়া আগুনে প্রবেশ করবে, ফুটন্ত পানির (কুয়া) থেকে এদের পানি পান করানো হবে; খাবার হিসেবে কাঁটাবিশিষ্ট গাছ ছাড়া তাদের জন্য আর কিছুই থাকবে না, এ (খাবার)-টি যেমন) তাদের পুষ্ট করবে না, তেমনি (তা দ্বারা) তাদের ক্ষুধাও মিটবে না’- সূরা আল্ গাশিয়াহ- ২,৩,৪,৫,৬ ও ৭। আল্লাহর পক্ষ থেকে বিপদ-আপদ আসার পরও আমাদের সম্বিত ফেরে না। বেলেল্লাপনায় মেতে উঠি সর্বত্রই। ভয়ংকর করোনাও কি আমাদের জীবনকে বদলাতে পারেনি? এখনো রয়েছে নিরন্তর সুযোগ আর সেই সুযোগের যেন সহযাত্রী আমরা হতে পারি সবাই, ‘সে দিনটিই সত্য, কেউ ইচ্ছা করলে (এখনো এই সত্যের দ্বারা) নিজের মালিকের কাছে একটা আশ্রয় খুঁজে নিতে পারে। আমি অবশ্যই আসন্ন আযাব সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করে দিয়েছি, সেদিন মানুষ দেখবে তার হাত দুটি (এ দিনের জন্যে) কী কী জিনিস পাঠিয়েছে, (এ দিনকে) অস্বীকারকারী ব্যক্তি তখন বলে উঠবে, হায়, কতো ভালো হতো যদি মানুষ (না হয়ে) আমি (আজ) মাটি হতাম’- সূরা আন্ নাবা – ৩৯, ৪০। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে আমরা সবাই এসেছি- শিক্ষা ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, আইন ব্যবস্থা- সব কিছু একই কাতারে যেন বন্দি আর এই অসহায় ব্যবস্থারা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আল্লাহর আরশপানে- বিগলিত কন্ঠে বলে উঠে তারা, ‘আমাদেরকে বাঁচান এই সব দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে’।
লেখক: সভাপতি, রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি),
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল