বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকার প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনছে ১৬ থেকে ২২ টাকায়। অথচ একই বিদ্যুৎ কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন হয় মাত্র ৪০ পয়সা ব্যয়ে। বিদ্যুৎ খাতে সরকার কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিলেও কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উন্নয়ন কিংবা সম্প্রসারণে বিশেষ কোনো নজর নেই। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সরকারের একটি শ্রেণী বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে যত আগ্রহী নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে সেই তুলনায় অনাগ্রহী। কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কম খরচে উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু এর সংস্কারে কর্তৃপক্ষের নজর নেই। অথচ কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্প্রসারণের বহুমুখী সুযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, কাপ্তাই এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে পরিচালনা করা হচ্ছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ১৯৬২ সালে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৮ সালে এসে এটিকে সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সর্বমোট ৫টি ইউনিটে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের পুরানো বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদনের সক্ষমতা ক্রমে কমে আসছে। শুষ্ক মৌসুমে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় একাধিক ইউনিটে।
যেগুলো চলছে সেগুলোও পুরোদমে চলতে পারে না। যথোপযুক্ত সংস্কার কার্যক্রমের অভাবে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কেবলই কমছে। অথচ এটি দেশের সবচেয়ে সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় মাত্র ৪০ পয়সা। যা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গড়ে ১২ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। সরকার বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে ১৬ থেকে ২২ টাকা দরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনে আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে ৩.৭৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১১.৪৬ টাকা দরে বিক্রি করে। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি হাজার হাজার কোটি টাকা।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো গেলে এই খাতে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করার সুযোগ রয়েছে।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিনের পুরানো কেন্দ্রটির প্রতিটি ইউনিটেই সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিটের অবস্থা খুবই খারাপ। ২০১৮ সাল থেকে এই দুইটি ইউনিট সংস্কারের জন্য দফায় দফায় উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা জটিলতায় কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ওই দুইটি ইউনিট সংস্কারে ১২০ কোটি টাকা ব্যয় হবে উল্লেখ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন কাজ না হওয়ায় বর্তমানে তা দুইশ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের প্রচুর পানি অপচয় হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো টারবাইন ঠিকঠাক না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। কেন্দ্রটি সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, বর্তমানে দুইটি ইউনিটের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এই দুইটি ইউনিট সংস্কার করা হলে উৎপাদন কিছুটা বাড়তো বলেও সূত্র জানিয়েছে। ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার এই কেন্দ্রে উৎপাদন ১শ’ মেগাওয়াটেরও নিচে নেমে এসেছে। এতে সরকারের শত শত কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে বলেও সূত্র জানায়।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংস্কার এবং উন্নয়নে সরকারের প্রকল্প রয়েছে। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সবকিছুর খরচই তো বাড়ছে।
কেন্দ্রটি সংস্কার করা না হলে অচল হয়ে যাওয়ার আশংকার কথাও তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের পুরানো অনেক যন্ত্রপাতি রয়েছে। এগুলো সময়মতো সংস্কার করা না হলে সমস্যাতো হবেই।