বিশ্ব সাহিত্যে জেমস জয়েস একটি বিখ্যাত নাম। ইংরেজ এই ঔপন্যাসিক কিশোরকাল থেকেই সাহিত্যের প্রতি প্রবল অনুরাগী ছিলেন। তাঁর কিশোররচনা মূলত কবিতা ও কাব্যধর্মী গদ্য। পরবর্তীকালে ঔপন্যাসিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। জেমস জয়েসের জন্ম ১৮৮২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। তাঁর কবিতা লেখার শুরু নয় বছর বয়স থেকে। কলেজে পড়াকালীন ইবসেনের নাটকের ভক্ত হয়ে ওঠেন। একটি পত্রিকায় ইবসেনের নাটক সম্পর্কে তাঁর লেখা একখানা প্রবন্ধ ছাপা হলে স্বয়ং ইবসেন সেটি পাঠ করে প্রীত হন। পারিবারিক জীবনে নিত্য অভাব আর অর্থকষ্টের মধ্যেও পিতা জন জয়েস তাঁকে বই কেনার জন্য অর্থের জোগান দিতেন। এরই মধ্যে ইউরোপীয় উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো পড়া শেষ হয়ে যায় জয়েসের। ১৯০২ সালে তিনি অর্জন করেন বি.এ ডিগ্রি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় গ্রন্থ-আলোচনা লিখে যা রোজগার হয় তা দিয়ে জীবন চালানো অনেকটাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। কিন্তু দমে যান না জয়েস। কখনো স্কুলে সামান্য মাইনের চাকরি, কখনো ব্যাঙ্কে কেরানীর কাজ, কখনো গৃহশিক্ষকতা – আর লেখালেখি, সেতো মনের নিরন্তর তাগিদ। এই তাগিদ থেকেই তিনি সৃষ্টি করে গেছেন একের পর এক। জয়েসের বিখ্যাত সাহিত্যকর্মের মধ্যে উপন্যাস ‘পোর্ট্রেট অব দ্য আর্টিস্ট অ্যাজ আ ইয়াং ম্যান’, ‘ইউলিসিস’, ‘ফিনিগানস ওয়েক’; ছোটগল্প ‘দ্য ডেড’, ‘ডাবলিনার্স’ এবং কবিতা সংকলন ‘চেম্বার মিউজিক’ উল্লেখযোগ্য। জয়েসের রচনার স্বকীয়তা তাঁর গদ্যশৈলী, বাক্যবিন্যাস, ভাষার ব্যবহার – যা পাঠ করলে মনে হয় কিছু দুরূহতার মধ্যেই তিনি তাঁর রচনার অর্থ উদঘাটনে সচেষ্ট হয়েছেন। জয়েসের লেখায় বিভিন্ন অংশ জুুড়ে এসেছে ডাবলিনের প্রসঙ্গ। মানব মনের অন্তর্দ্বন্দ্ব কোথাও কোথাও গভীরভাবে প্রবহমান, যা তাঁর ব্যক্তি জীবনেরই সংযোজন বলে অনেক সময় প্রতীয়মান হয়। ২০১৩ সালের জুনে জেমস জয়েসের অপ্রকাশিত ১০টি ছোটগল্প নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে আয়ারল্যান্ডের ইথিস নামের একটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কাহিনিগুলো ১৯২৩ সালে লেখা। ১৯৪১ সালের ১৩ই জানুয়ারি জেমস জয়েস প্রয়াত হন।