২০২০–২০২১ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস শুরু হচ্ছে আগামীকাল (৪ অক্টোবর)। করোনা মহামারির কারণে স্কুল–কলেজ বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাস গ্রহণের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব–কমিটি। সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ৪ অক্টোবর (আগামীকাল) থেকে কলেজগুলোকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে অনলাইনে কোন পদ্ধতিতে ক্লাস নেয়া হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি নির্দেশনায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্দেশনা দিলেও শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে অনলাইনে ক্লাস গ্রহণে এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয় অধিকাংশ কলেজ। কেবল মহানগরের হাতেগোনা কয়েকটি কলেজ জুম প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে অনলাইনে ক্লাস গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে। বাকি কলেজগুলো শিক্ষকের ক্লাস ভিডিও ধারণের মাধ্যমে তা ফেসবুকে শেয়ার দিয়েই অনলাইন ক্লাসের প্রস্তুতি সেরেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর সরাসরি যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রশ্ন করার সুযোগও নেই শিক্ষার্থীদের।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখার তথ্য অনুযায়ী– শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত ২৭০টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি কলেজের সংখ্যা ২৩টি। আরো ৩০টি কলেজ জাতীয়করণ করা হলেও শিক্ষক–কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণ আটকে রয়েছে। ফলে এসব কলেজকে এখনো পুরোপুরি সরকারি বলা যাচ্ছে না। এদিকে, মোট ২৭০টি কলেজের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে কলেজের সংখ্যা ৮৫টি। এর ৮টি সরকারি। বাকি কলেজগুলো এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি।
এসব কলেজের হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ কলেজই ফেসবুক ও ওয়েবসাইটে ভিডিও শেয়ার করে অনলাইনে ক্লাস নেবে। যাতে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ থাকছে না। সুযোগ নেই শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করারও।
অনলাইন ক্লাসের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য জাতীয়করণকৃত লামা মাতামুহুরী কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের কলেজের নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। শিক্ষকের ক্লাস ভিডিও করে তা এই ফেসবুক পেজে শেয়ার দেয়া হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ক্লাসটি দেখার সুযোগ পাবে। মাতামুহুরী কলেজের মতো গ্রামাঞ্চলের ৯৫ ভাগেরও বেশি কলেজের প্রস্তুতি এমনই। কেবল গ্রামাঞ্চলের কলেজগুলোতেই নয়, মহানগরের নামকরা অধিকাংশ কলেজের প্রস্তুতিও এমনটাই। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর স্বপন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের ক্লাসটি ভিডিও ধারণ করে তা কলেজের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে শেয়ার দেয়া হবে। এভাবেই কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার সুযোগ পাবে বলে জানান তিনি। জুম প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সরাসরি যুক্ত করে ক্লাস গ্রহণে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন কলেজ ও শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন– বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের স্পিডজনিত সমস্যা প্রকট। আবার ইন্টারনেট বান্ডেল ক্রয়ে সব শিক্ষার্থীর সক্ষমতা থাকে না। এছাড়া সব শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টফোনও নেই। এসব সমস্যার কারণে এখনই জুম প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না।
কিছু সীমাবদ্ধতার বিষয় স্বীকার করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক আজাদীকে বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতা তো রয়েছেই। যার কারণে কিছু সংখ্যক কলেজ শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে অনলাইন ক্লাস নিতে সক্ষম হলেও বেশির ভাগ কলেজ সেটি পারছে না। অধিকাংশ কলেজই ভিডিও আপলোড করে অনলাইন ক্লাস নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এধরণের ক্লাসে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মাঝে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ নেই বলেও স্বীকার করেন কলেজ পরিদর্শক। আর অনলাইন ক্লাস গ্রহণের পদ্ধতি বিষয়ে সামনে হয়তো স্পষ্ট নির্দেশনা আসতে পারে বলেও জানান তিনি।
যদিও মহানগরে সরকারি ও বেসরকারি হাতেগোনা কয়েকটি কলেজ জুম প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সরাসরি যুক্ত করে অনলাইন ক্লাস গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, বাকলিয়া সরকারি কলেজসহ আরো কয়েকটি কলেজের এ ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। জুম প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে আগে থেকেই ক্লাস নেয়া হচ্ছে জানিয়ে বাকলিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন খান আজাদীকে বলেন, আমরা আগে থেকেই দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নিয়ে আসছি। জুমের মাধ্যমে শিক্ষকরা লাইভ ক্লাস নেন। এতে শিক্ষার্থীরাও সরাসরি যুক্ত থাকে। ফলে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর সরাসরি যোগযোগ হচ্ছে। কোনো বিষয় না বুঝলে শিক্ষককে সরাসরি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তা বুঝে নেয়ার সুযোগও রয়েছে। একই তথ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. অজয় কুমার দত্ত বলেন, আগে থেকেই আমরা দ্বাদশ, ডিগ্রি, অনার্স–মাস্টার্সের অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। ক্লাসের পাশাপাশি এরইমধ্যে ফার্স্ট ইয়ারের (পুরোনো) শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে জুমের মাধ্যমে।
এখন একাদশ শ্রেণির ক্লাসও একইভাবে নেয়া হবে। ইতোমধ্যে অনলাইন ক্লাসের রুটিন চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানান শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. অজয় কুমার দত্ত।