কক্সবাজারে নারী পর্যটককে অপহরণের পর গণধর্ষণ

হোটেল ম্যানেজার গ্রেপ্তার, শনাক্ত আরো ৩, ৭ জনকে আসামি করে মামলা

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

স্বামী-সন্তানকে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৫ বছর বয়সী ঢাকার এক গৃহবধূ। সংঘবদ্ধ একটি চক্র শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে ওই নারীকে তুলে নিয়ে তার স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে ও হত্যার হুমকি দিয়ে কয়েক দফা ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে খবর পেয়ে বুধবার রাত দেড়টার দিকে জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে র‌্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। আসামিদের মধ্যে ঘটনাস্থল আবাসিক হোটেল জিয়া গেস্ট ইন-এর ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে (৩৩) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত অপর তিন আসামিকে আবাসিক হোটেলটির সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।
দৈনিক আজাদীর কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান ওই নারীর বরাত দিয়ে জানান, গত মঙ্গলবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন ওই নারী পর্যটক। তারা শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে ওঠেন। বুধবার বিকেলে ওই হোটেল থেকে তারা লাবণী পয়েন্ট সৈকতে বেড়াতে গেলে সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যার পর কয়েকজন দুর্বৃত্ত মিলে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে সিএনজি টেক্সিতে করে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় ওই নারীকে আরেকটি টেক্সিতে তুলে নেয় তিন যুবক। এরপর ওই নারীকে প্রথমে পর্যটন গলফ মাঠ সংলগ্ন সৈকতের ঝাউবাগানের একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে ধর্ষণ করে। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে। সেখানে ওই তিন যুবক তাকে আরেক দফা ধর্ষণ করে। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুমের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তিন যুবক। ওই নারী আরো জানান, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবককে ডেকে তার সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন তিনি। এরপর ৯৯৯-এ ফোন দিলে র‌্যাব তাকে উদ্ধার করে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে জানান, ধর্ষণের শিকার নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা রুজু করেছে। মামলার আসামিরা হল- কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আবদুল করিমের ছেলে আরিফুল ইসলাম আশিক, মোহাম্মদ শফির ছেলে আব্দুল জব্বার জয়, বাবু ও রিয়াজউদ্দিন ছোটনসহ অজ্ঞাতনামা আরো তিনজন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, কীভাবে শত শত ট্যুরিস্টের সামনে একটি জনবহুল এলাকা থেকে একজন নারী পর্যটককে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হল, তার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও থানা পুলিশ যৌথভাবে তদন্তে নেমেছে।
এদিকে অভিযুক্তরা স্থানীয়দের কাছে বখাটে যুবক হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলাও রয়েছে। আসামি আশিক মাত্র চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পায়।
বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ জানায়, গৃহবধূ ধর্ষণ মামলার আসামিরা কক্সবাজার শহরসহ জেলার অন্যান্য স্থানের বাসিন্দা। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাইরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে আবাসিক হোটেল কক্ষ থেকে উদ্ধার করে। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে পর্যটন গলফ মাঠ এলাকা থেকে স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় সহায়তার অভিযোগে হোটেলটির ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আবাসিক হোটেলটির সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে তিন জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ রেস্তোঁরা মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি নাঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, ‘করোনার কারণে অনেকদিন পর্যটক ছিল না। এখন পরিস্থিতি একটু ভালো হওয়ায় পর্যটক বাড়ছে। তার মধ্যে এই ধরনের ধর্ষণের ঘটনা খুবই খারাপ সংবাদ। আমাদের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করা দরকার। তাহলে এই পর্যটন সেক্টরটা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’
ঘটনা সন্দেহজনক : এসপি
বাংলানিউজের এক খবরে বলা হয়, নারী পর্যটককে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনাটি সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার নারী গত দুই মাসে তিনবার কক্সবাজার এসেছেন। এর আগেও দুই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন ওই নারী। তাই বিষয়টি একটু সন্দেহজনক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলামায় প্রবাসীর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধইপিজেডে সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার