এবার মেশিনেই ধান কাটছেন বেশিরভাগ কৃষক

চন্দনাইশ

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | সোমবার , ১৬ মে, ২০২২ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চলতি মৌসুমে চন্দনাইশে বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। এবার ধান কাটা শ্রমিকের সংকট ও মজুরি বেশি হওয়ায় অধিকাংশ কৃষকই উন্নত প্রযুক্তির কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে ধান কেটে গোলা ভর্তি করছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত চন্দনাইশে ৪৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় চলতি মৌসুমে মোট ৩ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ৩ হাজার ৪২৫ হেক্টর। সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিলের পর বিল সোনালি ধান শোভা পাচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে উপজেলায় পুরোপুরি ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। তবে এবার ধান কাটা শ্রমিকের সংকট ও মজুরি বেশি হওয়ায় উন্নত প্রযুক্তির কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে ধান কেটে গোলা ভর্তি করতে দেখা গেছে। তবে কিছু কিছু কৃষক এখনো শ্রমিকের মাধ্যমেই ধান কাটছেন।
উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে গিয়ে কথা হয় বোরো চাষি মাহাবুবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার ১২ কানি জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে তিনি উন্নত প্রযুক্তির কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা শুরু করেছেন। তিনি জানান, উক্ত মেশিনে ধান কাটা খুব সহজ এবং ধানের কোনো ক্ষতি হয় না। এই মেশিনের সাহায্যে প্রতি কানি জমির ধান কাটতে ব্যয় হয় ৩ হাজার টাকার মতো। জমি থেকে ধান কেটে একসাথে বস্তায় ভরে সমস্ত ধান বাড়িতে নিয়ে আসা যায়। এতে সময় সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি কোনো ধরনের ঝুঁকিও থাকে না। অপরদিকে ধান কাটা শ্রমিকের মাধ্যমে সমপরিমাণ জমির ধান কাটতে প্রচুর সময়ের প্রয়োজন হয় এবং ৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। তার মধ্যে ধান কাটা, আটি বেঁধে বাড়িতে নিয়ে আসা, গাছ থেকে ধান ছাড়ানো, বস্তায় ভরাসহ নানা ঝাঁমেলা পোহাতে হয়।
তবে কিছু কৃষক হারভেস্টার মেশিনে ধান নষ্ট হওয়ার ভয়ে এখনো শ্রমিকের মাধ্যমেই ধান কাটছেন। উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
কৃষকরা জানান, নিয়মিত জমিতে সেচ দেয়া, পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ, আগাছা নিড়ানো, প্রয়োজনীয় ও পরিমিত কীটনাশক ব্যবহার, ক্ষেতে পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় বোরোর ফলন ভালো হয়েছে।
দোহাজারী পৌরসভার চাগাচর গ্রামের কৃষক আবদুল মাবুদ জানান, এখানকার ইস্কিম ম্যানেজাররা বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার অনেক পরে সেচ মেশিনগুলো চালু করেন। এতে সেচের অভাবে সময় মতো বোরো আবাদ শুরু করতে পারেন না তারা। এতে শুরুতেই বোরো ধান রোপণে দেরি হওয়ায় ধান পাকতে সময় লাগে এবং অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে কৃষকরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাই ইস্কিম ম্যানেজাররা যাতে বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সেচ মেশিনগুলো চালু করেন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বোরা চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ স্মৃতি রানী সরকার জানান, সল্প সময়ের মধ্যে অধিক ফলন পেতে বর্তমানে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠে সার্বক্ষণিক কৃষকের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন যাতে কৃষকদের কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়। তিনি বলেন, নিয়মিত সেচ সুবিধা, পার্চিং পদ্ধতি, ক্ষেতে সুষম সার প্রয়োগের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করায় বোরো চাষে সফল হয়েছে কৃষকরা। ইতিমধ্যে উপজেলায় ৪৫ ভাগ ধান কাটা শেষ করেছেন কৃষকরা। আগামী ১০ দিনের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলেও জানান তিনি। এ সময়ের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না হলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি কি চায় নিজেরাই জানে না : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধলায়নিজম একটি ভালোবাসার নাম