নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন নতুন ফিশারিঘাট এলাকা থেকে ৯৭৫ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথসহ (আইস) ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র্যাব। উদ্ধারকৃত ক্রিস্টাল মেথের আনুমানিক মূল্য এক কোটি টাকা। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের আটক করা হয়। আটক তিনজন হলেন পটিয়া থানার পূর্ব বাতুয়া এলাকার মো. মুছার ছেলে শহিদুল ইসলাম টিপু (২৮), একই থানার বাতুয়া এলাকার মৃত কাজী মাহমুদুল হকের ছেলে কাজী আমিনুর রশিদ (৪৮) ও রাউজান থানার গুজরা এলাকার মৃত হাজী নূর আলমের ছেলে সাইমন তারেক (৪৯)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত আইস সেবনে মৃত্যু অপরিহার্য। তারপরও তরুণরা এর দিকে ঝুঁকছে। আগে থেকে ইয়াবায় আসক্ত মাদকসেবীদের মধ্যে আইস গ্রহণের প্রবণতা বেশি। মূলত ক্রিস্টাল মেথামফিটামিনের সংক্ষিপ্ত নাম ক্রিস্টাল মেথ। এটি দেখতে স্বচ্ছ পাথরের মতো। রং নীলাভ সাদা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধ ক্ষেত্রে সৈনিকদের সজাগ ও উদ্দীপ্ত রাখতে মেথ ব্যবহারের কথা শোনা গেছে। উন্নত বিশ্বে চিকিৎসকরা স্থূ্থলতা দূর করতে ও অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডারের (এডিএইচডি) চিকিৎসায় সীমিত ক্ষেত্রে মেথামফিটামিন ব্যবহার করেন।
র্যাবের সিইও মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি খুলশী থানা এলাকা থেকে র্যাব প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে ১৪০ গ্রাম আইস উদ্ধার করে।
তিনি জানান, উদ্ধারকৃত ৯৭৫ গ্রাম আইস টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন পটিয়ার মো. রুবেল (৩২) নামে এক মাছ ব্যবসায়ী। পরে তিনি সৌদি আরব চলে যান। এরপর এ মাদকগুলো বিক্রয়ের জন্য কোতোয়ালী এলাকায় নিয়ে আসে এ মাদক চক্রটি। সোমবার রাতে তাদের ফিশারিঘাট এলাকা থেকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের তল্লাশি করে একটি ব্যাগ থেকে ৯৭৫ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি টাকা। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকগুলো বিক্রি করে আসছিল। চট্টগ্রামে আইস উদ্ধারের এটা তৃতীয় ঘটনা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে একটি সক্রিয় মাদক কারবারি চক্র আইসের বাজার তৈরি করার অপচেষ্টা করে আসছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মাদকের ক্ষতিকর দিক হলো, এটা ইয়াবার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ক্ষতিকর। এটা ধোঁয়া, নাক ও ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। সিনথেটিক স্টিমুলেন্ট জাতীয় এই মাদক পশ্চিমা বিশ্ব, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে ৮ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথসহ তিনজনকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এরপর ওই বছরের ২৭ জুন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ক্রিস্টাল মেথসহ নাইজেরীয় একজন নাগরিককে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দফতর। তার কাছে এ ধরনের ৫২২ গ্রাম মাদক পাওয়া যায়। সেই মাদক আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
চট্টগ্রামে র্যাব ছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে ইতোপূর্বে আইস ধরা পড়ে। চন্দনাইশ উপজেলা থেকে গত ১ মে আইসসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তার কাছ থেকে ২০০ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়েছিল। ওটা ছিল আইস উদ্ধারের দ্বিতীয় ঘটনা।