ঋত্বিক ঘটক (১৯২৫–১৯৭৬)। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এবং জীবনমুখী সাহিত্য ধারায় ঋত্বিক ঘটক এক বিশিষ্ট শিল্পী। প্রথম জীবনে কবি ও গল্পকার তারপর নাট্যকার, নাট্যপরিচালক, অবশেষে চলচ্চিত্রকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। অসম্ভব সৃজনশীল চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক ৪ নভেম্বর, ১৯২৫ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তাঁদের আদি নিবাস ছিলো পাবনা জেলার ভারেঙ্গায়। ছাত্রাবস্থায় লেখক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। ঋত্বিক ঘটক ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এম.এ কোর্স শেষ করেও পরীক্ষা না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘে (আইপিটিএ) যোগদান করেন। এসময় তিনি নাটক লেখেন, পরিচালনা করেন ও অভিনয় করেন এবং বের্টোল্ট ব্রেশ্ট ও নিকোলাই গোগোল–এর রচনাবলি বাংলায় অনুবাদ করেন। এই বৎসরে তিনি নিমাই ঘোষের ‘ছিন্নমূল‘ ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। এই ছবিতে তিনি অভিনয় করেন এবং সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর নিজের পরিচালিত ‘নাগরিক‘ মুক্তি পায়। তবে আর্থিক কারণে ছবিটি সে সময়ে মুক্তি পায়নি। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দেই মুক্তি পায় তাঁর ‘অযান্ত্রিক’ ছবি। এই ছবিটির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রকার–রূপে হিসাবে খ্যাতিমান হয়ে উঠেন। এরপর ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় ‘বাড়ি থেকে পলিয়ে’ ছবিটি। ১৯৬১–৬২ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে তাঁর পরিচালিত তিনটি ছবি মুক্তি পায়। এই ছবিগুলো হলো– মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬১), কোমল গান্ধার (১৯৬১) এবং সুবর্ণরেখা (১৯৬২)। এই তিনটি চলচ্চিত্রকে ট্রিলজি বা ত্রয়ী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, যার মাধ্যমে কলকাতার তৎকালীন অবস্থা এবং উদ্বাস্তু জীবনের রূঢ় বাস্তবতা চিত্রিত হয়েছে।
এ ছাড়াও তাঁর পরিচালিত অন্যছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ প্রভৃতি। ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’ ছবিটি ঋত্বিক ঘটকের নিজের লেখা কাহিনি অবলম্বনে তৈরি। তাঁর প্রতিটি ছবিই শিল্পনিষ্ঠ, মননশীলতায় ঋদ্ধ। চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও দুটি উপন্যাস, বেশ কিছু নাটক, কিছু ছোটগল্প এবং চলচ্চিত্র ও শিল্পকলা বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেছেন তিনি। সম্পাদনা করেছেন ‘অভিধারা’ ও ‘অভিনয়দর্পণ’ নামের দুটি পত্রিকা। সকল ক্ষেত্রেই বিশুদ্ধ ও নির্মোহ মানবচর্চার স্বাক্ষর রেখেছেন শিল্পী। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।