বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এবং জীবনমুখী সাহিত্য ধারায় ঋত্বিক ঘটক এক বিশিষ্ট শিল্পী। তাঁর কর্ম ও সৃজনক্ষেত্রের পরিধি কেবল চিত্র পরিচালনা ও কথাসাহিত্যে নয়, ভারতের পুনা ফিল্ম ইনস্টিটিউটে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘকাল। প্রথম জীবনে কবি ও গল্পকার তারপর নাট্যকার, নাট্যপরিচালক, অবশেষে চলচ্চিত্রকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। আজ তাঁর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।
ঋত্বিক ঘটকের জন্ম ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর পাবনার নতুন ভারেঙ্গায়। লেখাপড়া করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে। ছাত্রাবস্থায় লেখক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তবে সে সময় নাটক ও পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র তাঁর জীবনে বিশেষ প্রভাবক ভূমিকা রেখেছিল। ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দিয়ে ঋত্বিক ঘটক বেশ কিছু নাটক রচনা ও পরিচালনা করেন। অভিনেতা হিসেবেও ছিলেন যথার্থই প্রতিভাবান। গণনাট্য সংঘ প্রযোজিত নাটক ‘বিসর্জন’-এ রঘুপতির ভূমিকায় তাঁর অনবদ্য অভিনয়ে তারই প্রমাণ মেলে। চলচ্চিত্রের পথে তাঁর যাত্রার শুভ সূচনা খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক বিমল রায়ের সহযোগী হিসেবে। পরবর্তী সময়ে নিজেই পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’ ছবিটি ঋত্বিক ঘটকের নিজের লেখা কাহিনি অবলম্বনে তৈরি। তবে তাঁর প্রথম তৈরি ছবি ‘নাগরিক’ আর্থিক কারণে মুক্তি পায় নি। ঋত্বিক ঘটকের পরিচালিত ছবির সংখ্যা-বাহুল্য নেই। কিন্তু প্রতিটি ছবিই শিল্পনিষ্ঠ, মননশীলতায় ঋদ্ধ। চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও দুটি উপন্যাস, বেশ কিছু নাটক, কিছু ছোটগল্প এবং চলচ্চিত্র ও শিল্পকলা বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেছেন তিনি। সম্পাদনা করেছেন ‘অভিধারা’ ও ‘অভিনয়দর্পণ’ নামের দুটি পত্রিকা। সকল ক্ষেত্রেই বিশুদ্ধ ও নির্মোহ মানবচর্চার স্বাক্ষর রেখেছেন শিল্পী। ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঋত্বিক ঘটক প্রয়াত হন।