যান্ত্রিক এই শহরে অনেক উৎসবের আয়োজন হলেও হয় না বই বিনিময় উৎসব। হয় না বই নিয়ে মাতামাতি। চায়ের কাপে এখন আর বই নিয়ে ঝড় উঠে না পাড়ার একমাত্র চায়ের দোকানটিতে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায়।
‘বই নয়, জ্ঞানের বিনিময়’ স্লোগানে গতকাল শুক্রবার চতুর্থবারের মতো চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে শাহ ওয়ালিউল্লাহ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করেছে ফেইলড ক্যামেরা স্টোরিজ। সংগঠনটির উদ্যোগে এর আগে তিনবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যতিক্রম এ আদান–প্রদান।
কেউবা নিয়ে আসছে নিজের সংগ্রহে থাকা রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা কিংবা হুমায়ুন আহমেদের শ্রেষ্ঠ চরিত্র হিমু সমগ্র। বই বিনিময় উৎসবে এসে নিজের পড়া বইটি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সমরেশ মজুমদারের গর্ভধারিণী কিংবা শরৎচন্দ্রের উপন্যাস সমগ্র। এভাবেই হচ্ছে বই বিনিময়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা বাড়াতে এবং আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সমস্যার কারণে যেসব শিক্ষার্থী বই সংগ্রহ করতে পারছে না তাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বজনীনভাবে এ বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিবছর চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান মোড়ে বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি। দীর্ঘ তিন বছরেরও অধিক সময় ধরে এই বই বিনিময় উৎসবটি আয়োজিত হয়ে আসছে। এরই মধ্যে এই অভিনব উৎসবটি তারা পৌঁছে দিয়েছেন দেশের নানা প্রান্তে। সামিল করেছেন সকল বয়সের শ্রেণী–পেশার মানুষকে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার চতুর্থবারের মতো তারা আয়োজন করে বই বিনিময় উৎসবের। শুরুতে জামালখান মোড়ে বরাবরের মতো এই আয়োজন করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ভারী বর্ষণের কারণে তারা জামালখানস্থ শাহওয়ালীউল্লাহ ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে এই আয়োজন করে।
ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের পরিচালক এবং বই বিনিময় উৎসবের সমন্বয়ক সাইদ খান সাগর জানান, মূলত বর্তমান সময়ে পাঠকদের বইয়ের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী করে তুলতেই এই আয়োজন। কেউ যখন বিনামূল্যেই তার অপঠিত বইটি বিনিময়ের মাধ্যমে পাচ্ছেন তখন তিনি তার জ্ঞানচর্চাকে অব্যাহত রাখতে পারছেন। বই বিনিময়ের ধারণা তো নতুন কিছু নয়। স্কুলজীবনে বন্ধুদের সাথে আমরা তিন গোয়েন্দা সিরিজের বইগুলো যেভাবে বিনিময় করে নিতাম, এই আয়োজন তারই এক আনুষ্ঠানিক সংস্করণ। তাছাড়া চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বইপ্রেমী মানুষদের জন্য এর থেকে ভালো উপহার আর কিছুই হতে পারে না।
উৎসবে আসা হাসনাত কাদির বলেন, যে বইগুলো আমি পড়ে ফেলেছি, সেগুলোর বিনিময়ে অন্য বই নিতে পারছি। এটা ভালো একটি উদ্যোগ। তার ভাই ফাইহান বলেন, বই নিয়ে এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। পুরনো বই পরিবর্তন করার এমন সুযোগ পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।
উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) শাব্বির ইকবাল বই বিনিময় উৎসবের ধারণাকে আরো বেশি ছড়িয়ে দিতে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি ভবিষ্যতেও এ ধরনের কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন। এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বই বিনিময় উৎসবের সমন্বয়ক সাইদ খান সাগর। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন রিনভী নুসরাত প্রাপ্তি, জাবেদ মাহমুদ, হাসিব আহমেদ, ঋত্বিক বড়ুয়া, ত্রিয়মা রায় প্রমুখ।
বিকালে বই বিনিময় উৎসবস্থলে আসেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি বলেন, এই ধরনের উৎসব, যেখানে যে কেউই বিনামূল্যে বই বিনিময় করছেন তা তো আমাদের পাঠকদের জন্য দারুণ এক সুযোগ। জ্ঞানচর্চায় আমরা যে পিছিয়ে নেই, আমাদের তরুণেরাও যে সৃজনশীল চিন্তা করতে পারেন তারই এক স্বাক্ষর রাখলেন আয়োজকেরা। এই ধরনের আয়োজন আরো বেশি বেশি হওয়া জরুরি।
কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ ও অন্যান্য, ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, কবিতা, ক্যারিয়ার ও বিজ্ঞান, সমগ্র, জাফর ইকবাল ও হুমায়ুন আহমেদ, শিশুতোষ ও ম্যাগাজিন, একাডেমিক, আত্মজীবনী, ইতিহাস ও রাজনীতিসহ মোট এগারোটি স্টলে দিনব্যাপী এই বই বিনিময় উৎসবে প্রায় ১৪ হাজার বই বিনিময় হয়েছে বলে জানায় আয়োজকরা।