দলের নির্দেশনা অমান্য করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ‘সময় মত’ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তার ইঙ্গিত দিয়ে কাদের বলেন, দলীয় নির্দেশনা অমান্য করলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের ব্যাপারে চিন্তা করা হবে। সময়মত এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই করা হবে। খবর বিডিনিউজের।
জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপি ও সমমনারা। ক্ষমতাসীন দল স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ তৈরি করতে দলীয় প্রার্থী না দেওয়া এমনকি কাউকে সমর্থন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা যেন ভোটে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন সে জন্য তাদের স্বজনদেরকে ভোট থেকে দূরে রাখার নির্দেশও এসেছে। তবে বেশ কিছু এলাকায় সংসদ সদস্যের একাধিক স্বজন প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। দুয়েকজন অবশ্য নানা ঘটনায় ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রথম পর্যায়ের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় চলে গেছে। কেউ কেউ বলেছেন, বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সুবিধা হত। তারপরেও প্রত্যাহার কেউ কেউ করেছেন, কেউ কেউ করেননি। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের যে সময়সীমা তারপরেও ইচ্ছা করলে করতে পারবেন। কাজেই এই বিষয়টি চূড়ান্ত বলে মনে করা যাবে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করেছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, দল যার যার কর্মকাণ্ড বিচার করবে। চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত যারা (প্রার্থিতা) প্রত্যাহার করবে না, সময় মত দল ব্যবস্থা নেবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি একতরফা কোনো সমাবেশ করতে ‘অগ্নিসন্ত্রাস’ করে। জনগণের জানমালের নিশ্চয়তা, সম্পদ রক্ষা–সেখানে আমাদেরও সরকারি দল হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে। আমরা মাঠে থাকলে তারা অগ্নিসন্ত্রাস করার বিষয়ে একটা মানসিক বাধা পাবে। সে কারণে আমরা এটা করি। আমরা শান্তি সমাবেশ করছি, তারা বিক্ষোভ অনেক কিছু করছে।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সরকারের পতনের দাবিতে ২০২২ সালের অগাস্ট থেকে বিএনপি মাঠে নামার পর তাদের কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি যে কর্মসূচিই দিক, আওয়ামী লীগ করে আসছে ‘শান্তি সমাবেশ’ বা ‘শান্তি মিছিল’। বিএনপির বর্জনে নির্বাচনের সাড়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময় পর বিএনপি রাজধানীতে ২৬ এপ্রিল সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। তবে পরে গরমের কারণ দেখিয়ে তা স্থগিত করা হয়। আওয়ামী লীগও একইভাবে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছিল একই দিন। বিএনপি সরে আসার পর সেই কর্মসূচি স্থগিত করেছে ক্ষমতাসীনরাও। এতদিন এগুলোকে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে স্বীকার করতে রাজি ছিলেন না ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে কাদের বলেন, বিএনপি এবং আমরা একই দিন কত সমাবেশ করেছি? একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে, আমরা পাল্টাপাল্টি মারামারি করতে যাচ্ছি কিনা? তাদের সমাবেশে আমরা কোনো হামলা চালিয়েছি কিনা, সরকারি দল হিসেবে? তা হলে অসুবিধা কী? আমরা কি বাধা দিয়েছি? আমাদের সমাবেশ আমরা করছি, তাদের সমাবেশ তারা করেছে। নির্বাচন আগের দৃশ্যপট এটা।
ঢাকায় পাল্টাপাল্টি সমাবেশে দুই দলের মধ্যে কোনো সংঘাত হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশে শান্তি বজায় রাখছি। বিএনপি রাজপথের দখল নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কিনা–এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, দেখুন, এখন নির্বাচন হয়ে গেছে। নির্বাচন যারা বয়কট করেছে, তারা নির্বাচন করতে দেবে না, সে স্বপ্ন মাঠে মারা গেছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারবে না, ৫ দিনের মাথায় পড়ে যাবে। এমন দুঃস্বপ্ন তারা দেখেছিল।