শিক্ষা একটি জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন। অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি। কিন্তু গুণগত শিক্ষায় আমাদের পর্যায়ের অনেক দেশের তুলনায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি। উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় সেশনজট একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যাটির ফলে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করতে শিক্ষার্থীদের ৮ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। একই অবস্থা চলমান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট থেকে মুক্তি এবং দেশের মানুষের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেবার জন্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর যাত্রা শুরু হলেও নানা অব্যবস্থাপনায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। সেখান থেকে উত্তরণে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা হলেও, উচ্চ শিক্ষাস্তর পিছিয়ে গিয়েছে অনেকটাই।
যত্রতত্র অনার্স-ডিগ্রি কোর্স চালু, আসন সংখ্যার অতিরিক্ত ছাত্র-ছাত্রী নেওয়া, পর্যাপ্ত পাঠদানের সুযোগ না দেওয়া, খাতার সঠিক মূল্যায়ন না করেই ভুতুড়ে রেজাল্ট দেওয়া, বার বার চলমান পরীক্ষা স্থগিত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রায় সময়ই দেখা যায়। তাছাড়া একই সময়ে অনার্স, ডিগ্রি, মাস্টার্সসহ সকল কোর্সের পরীক্ষা নেওয়ার ফলে সুষ্ঠু সমন্বয় পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনার অভাবে পরীক্ষার মানসম্মত সময়সূচি তৈরিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এইভাবে সেশনজটে আটকে থাকলে চাকরির বয়স অতিক্রম করবে এবং দেশে বেকারত্ব বাড়বে।
কিন্তু একদিকে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সেশনজট দূর করতে পারছে না, অন্যদিকে সরকারও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়াচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়েছে তরুণরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর যে ২-৩ বছর সময় থাকছে, তা চাকরির এই তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে যথেষ্ট না। যথাসময়ে ২৩-২৪ বছরের মধ্যে মাস্টার্স শেষ করতে পারলে ক্যারিয়ার গঠনের প্রস্তুতির জন্য সময় পাওয়া যেত। করোনা মহামারির ফলেও শিক্ষা ব্যবস্থা থমকে গিয়েছে অনেকটাই। আর কোনো শিক্ষার্থীর যেন জীবন নষ্ট না হয় এটাই আমাদের সবার কাম্য। ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করাসহ উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করাটা এখন একান্তই প্রয়োজন।