আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ই’তেকাফ পালন করা হয়

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | মঙ্গলবার , ১১ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

মাহে রমজানে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের আশায় ই’তেকাফ পালন করা হয়। মাহে রমজানের মাগফেরাতের দশ দিন পর আসে মুক্তির সওগাত নিয়ে নাজাতের দশক। এই দশ দিনেই আল্লাহ্‌র বিশেষ অনুগ্রহ, অনুকম্পা, ক্ষমা ও করুণার আশায় মসজিদে মসজিদে পালন করা হয় ই’তেকাফ। রোজাদার মুসল্লিরা ই’তেকাফ আদায় করে বিশেষ ফজিলত ও পুণ্য অর্জনে সচেষ্ট থাকেন। মাহে রমজানের প্রতিটি দিনক্ষণ ও মুহূর্ত খুবই দামি ও মূল্যবান। ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে রোজাদার আল্লাহ্‌র দরবারে নিজেকে নিবেদন করতে সক্ষম হলে তবে জীবন হবে ধন্য। বছরে একটি মাস মহিমান্বিত মাহে রমজানে সিয়াম সাধনা, ইবাদতআরাধনা, দানসদকাহ ও জাকাতফিতরার মাধ্যমে রোজাদারকে আল্লাহ্‌র নৈকট্য ও সান্নিধ্যের কাছাকাছি নিয়ে যায়। তেমনিভাবে মাহে রমজানের শেষ দশ দিন ই’তেকাফ পালনের সুযোগ গ্রহণ করলে রোজাদারের মর্যাদা বাড়ে ও পুণ্যের থলি ভরে যায়। ই’তেকাফের শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা, কোনো বস্তুর ওপর স্থায়ীভাবে থাকা। ই’তেকাফের মাধ্যমে নিজের সত্তাকে আল্লাহ্‌র ইবাদতের মধ্যে আটকিয়ে রাখা হয় এবং নিজেকে মসজিদ থেকে বের হওয়া ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। ই’তেকাফ মাহে রমজানের একটি বিশেষ ইবাদত। শরীয়তের পরিভাষায় ই’তেকাফের নিয়তে পুরুষের মসজিদে অবস্থান করা অথবা কোনো মহিলার নিজ ঘরে নামাজের স্থানে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করাকে ই’তেকাফ বলা হয়। আগেভাগেই ই’তেকাফের প্রস্তুতি নেয়া দরকার। ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব হতে মসজিদে মসজিদে মুসল্লিরা ই’তেকাফের নিয়তে প্রবেশ করবে। আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় মসজিদে পূর্ণাঙ্গ অবস্থান করার মাধ্যমে মুসল্লিরা ই’তেকাফের নিয়তে সর্বক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত তসবিহতাহলিল, জিকিরে ব্যস্ত সময় কাটায়।

যিনি ই’তেকাফ করেন তাকে মু’তাকিফ বলা চলে। ই’তেকাফ যে কোনো সময় করা যায়। যখনই কেউ ই’তেকাফের নিয়তে মসজিদে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবস্থান করেন তখনই তা ই’তেকাফ বলে গণ্য হবে। তবে ২০ রমজানের সূর্যাস্তের পূর্ব হতে শাওয়াল তথা ঈদের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত ই’তেকাফ পালন করা সুন্নত। ই’তেকাফের উদ্দেশ্য হলো, দুনিয়ার সব রকম ঝামেলা থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে একমাত্র তাঁরই ইবাদতে নিবেদিত হয়ে পরিশুদ্ধি অর্জন। আমাদের হানাফী মাজহাব মতে রমজান শেষ দশ দিনের ই’তেকাফ হচ্ছে সুন্নাতে মুআক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ মসজিদের মুসল্লিদের পক্ষ হতে বা মহল্লার মধ্য হতে কোনো এক ব্যক্তি ই’তেকাফ করলে তা সকল মুসল্লি বা মহল্লাবাসীর পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে। তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে, মসজিদের মহল্লায় যিনি ই’তেকাফ আদায় করবেন তাঁর সেহ্‌রি ও ইফতারের আয়োজন মহল্লাবাসীকেই করতে হবে। কেননা, সবার পক্ষ থেকে এবং সবার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে মসজিদে এক বা একাধিক লোক ই’তেকাফ পালন করে থাকে। তাঁরা মহল্লাবাসীর প্রতিনিধিত্ব করেন বিধায় ই’তেকাফের সময়কালে তাঁদের খানাপিনার দায়িত্ব গ্রহণ ও খোঁজখবর নেয়া মহল্লাবাসীর ঈমানী দায়িত্ব।

আত্মশুদ্ধি, আত্মার পবিত্রতা অর্জন, আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা সাধন এবং মহান আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভই ই’তেকাফের মূল লক্ষ্য। তাছাড়া রমজানের শেষ দশ দিনের ই’তেকাফে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম একটি মর্যাদাবান রাতের (শবে ক্বদর) সন্ধান করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। ই’তেকাফের দ্বারা অশেষ বরকত রহমত ও পুণ্য অর্জিত হয়। পার্থিব যাবতীয় চিন্তা ও ঝামেলা মুক্ত হয়ে ই’তেকাফ গ্রহণের মাধ্যমে মানুষ বাতিলের মোকাবেলায় আল্লাহ্‌র দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক চেতনা, প্রেরণা ও শক্তি লাভ করে। একটি হাদিসে প্রিয় নবী (.) ইরশাদ করেছেন– ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানে দশ দিন ই’তেকাফ করল সে যেন দুটি হজ ও দুটি ওমরাহ পালন করল। যিনি ই’তেকাফ পালন করবেন তাঁকে বিশেষ কতগুলি নিয়ম মেনে চলতে হয়। পায়খানা প্রস্রাব এবং অজুগোসলের সময় ব্যতীত অন্য কোনো প্রয়োজনে ই’তেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না। এসব কারণে বের হলেও কারো সাথে কথা বলা, লেনদেন করা বা অযথা সময়ক্ষেপণ করতে পারবে না। মু’তাকিফ চুপ না থেকে সর্বদা দোয়াদরূদ, জিকির, নফল নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াতে লিপ্ত থাকাই শ্রেয়। আল্লাহ্‌ পাকের রহমত, করুণা, অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভের মাহেনদ্রক্ষণ ই’তেকাফের মাধ্যমে রোজাদারদের পরিশুদ্ধির সুযোগ যেন অবারিত হয় এই মিনতি ও ফরিয়াদ জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদের ছুটি বাড়ল আরো একদিন
পরবর্তী নিবন্ধনগরে মার্কেটগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তায় ১১ সিদ্ধান্ত