আর বড়শির ছিপ হাতে নিয়ে মাছ শিকারে যাওয়া হবে না সৌখিন শিকারি আবদুল খালেকের। বয়স ৭০ পেরুলেও ছিপ হাতে উঠলে যৌবনে ফিরে যেতেন বৃদ্ধ খালেক। গত পরশুও আগ্রাবাদ ডেবায় মাছ শিকারের কথা ছিল। কিন্তু শরীরে সুস্থতাবোধ না করায় বড়শি নিয়ে পুকুরঘাটে বসা হয়নি। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজের গড়া ৫তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় আগ্রাবাদ ডেবারপাড়ের বাসিন্দা সৌখিন মৎস্য শিকারি আবদুল খালেকের। নিহত আবদুল খালেক ওই এলাকার মৃত আবদুল মালেকের ছেলে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী যুবক মোহাম্মদ আলী সুজন বলেন, পাঁচ তলার ছাদে উঠলে মাথা ঘুরিয়ে দুই দালানের সরু গলির মধ্যে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। ঘটনাস্থলে যাওয়া ডবলমুরিং থানার এস আই মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে জানান, ‘আবদুল খালেক নামের ওই বৃদ্ধের নিজের ভবনটির পাঁচ তলার এক অংশের ছাদ ঢালাই হয়েছে। ঢালাইয়ের পানি দেখার জন্য উঠলে পা পিছলে নিচে পড়ে যান তিনি। নিচে পড়ার সময় মাথায় মারাত্মক জখম হয়। মাথার খুলি ফেটে যায়। তবে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহতের পরিবারের সম্মতিতে লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য অনুযায়ী, আবদুল খালেক বড়শি নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যেতেন। ২৫ থেকে ৩০ কেজি ওজনের মাছ শিকারের অভিজ্ঞতাও ছিল তাঁর ঝুলিতে। বড়শি পাগল মানুষটিকে স্থানীয়রা ‘বড়শি খালেক’ নামেই চিনেন। সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থল নিহতের বাড়িতে গেলে দেখা মিলেছে অসংখ্য উৎসুক মানুষের ভিড়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল খালেকের পড়শি ভাতিজা মো. ইমতিয়াজ সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থলে প্রতিবেদককে জানান, ‘খালেক চাচা দীর্ঘদিন দুবাইতে ছিলেন। ওখানে কারেন্ট মিস্ত্রি (বৈদ্যুতিক কাজের কারিগর) ছিলেন। কিছুদিন আগে নোয়াখালীর কেশবপার্কের দীঘিতে বড়শি বাইতে গিয়েছিলেন। বড়শির কথা বললে দেশের যেকোন স্থানে চলে যেতেন তিনি। পুকুর পাড়ে ছিপ হাতে দিনরাত বসে থাকতে পারতেন। আমাদের জন্মের আগে থেকেই তিনি মাছ শিকার করতেন। প্রায় ৪০-৫০ বছর ধরে শিকারে যান। নিজের ছিপ দিয়ে ২৫-৩০ কেজি ওজনের মাছও তুলে এনেছেন অনায়াসে। গত পরশুও আগ্রাবাদ ডেবায় বড়শি নিয়ে বসার কথা ছিল তার।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সালাউদ্দিন রাজিব বলেন, ৫ বছর আগেও মহামায়া লেক থেকে ১৭-১৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ শিকার করেছেন আবদুল খালেক। তাঁকে স্থানীয় লোকজন ‘বড়শি খালেক’ নামে চিনতেন। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে সৌদি আরবে থাকেন। ছোট ছেলে ব্যক্তিগত কাজে রোববার বরিশাল গিয়েছেন। এখন বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে চট্টগ্রামের পথে রয়েছেন।’