তথ্য ভিত্তিক তথ্য আমাদের মনগড়া ইচ্ছা আর ধারণার কাছে হার মানে! কভিডের টিকা দিতে গিয়ে যা দেখলাম তাতে মনে হলো বিজ্ঞান, হাসপাতাল ওটি আইসিইউ সমূহের প্রথা এবং পালনীয়, নিষেধ সমূহ, সতর্কতা, ষ্টেনডার্ড অপারেশন প্রসিজিওর, আইনকানুন বিধিবিধান সবকিছু কি বিলীন হয়ে গেল না ইচ্ছার কাছে সমর্পিত হল। হাসপাতালের এক্কেবারে মর্মস্থলে ওটি আইসিইউ ও সেন্ট্রাল ষ্টেরিলাইজেশন কমপ্লেঙ জুড়ে কভিড টিকা দান কেন্দ্র খোলা হয়েছে যে স্থান গুলো সংরক্ষিত এবং সবার জন্য আউট অব বাউন্ড।
চারদশকের মেডিকেল শিক্ষক, প্রশিক্ষক, ও বিশেষজ্ঞের শিক্ষা ও দীক্ষায় এসব প্রশাসনিক অনাচারকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কারও এতটুকু বোধ নেই যে প্রতিজন অপারেশনের, পোস্ট অপারেশন আর আইসিইউ রোগী সার্বক্ষণিক টিটেনাস, সেপটিসেমিয়া সহ আরও অনেক ভয়ংকর ঝুঁকিতে থাকবে। আর একবার জটিল সংক্রমণ হলে সমস্ত কমপ্লেক্স বন্ধ করে দিয়ে ফিউমিগেশন করতে হবে। প্রায় কোটি মানুষের জটিল চিকিৎসার ভরসাস্থল এই হাসপাতাল অকার্যকর হয়ে যাবে।
অনেক জায়গা আছে টিকা কেন্দ্রের জন্য। তাঁবু খাটিয়েও এই টিকা দেয়া যায়। আমাদের জাতীয় টিকাদান অনুক্রম অনেক অনেক পারদর্শী। পথে ঘাটে টিকাদান কর্যক্রম চালাতে। কেন কভিড টিকাদানকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ডাকডোল পিটিয়ে অজানি দেশের না জানি কিছুতে পরিণত করা হচ্ছে। একি আরেক আমলাতান্ত্রিক পদক্ষেপে?
আমার খুব অবাক লাগলো কোথায় সব বিশেষজ্ঞগণ, কোথায় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাগণ, কোথায় মেডিকেল ডেন্টাল কাউন্সিল। সবাই কি অজ্ঞ না নির্লিপ্ত না বাধ্যগত। জনস্বার্থ তথা জনস্বাস্থ্যের এত বড় ব্যত্যয়ে সবাই নির্লিপ্ত। চুপ নিশ্চুপ।
অবশ্য এমনি এক মনগড়া ইচ্ছা আগেও চাপিয়ে দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের উপর। মাষ্টার প্লান লংঘন করে মেডিকেল কলেজ ভবনের অংশের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। যাকে কখনও বলা হচ্ছে ক্যানসার হাসপাতাল কখনও ক্যানসার ইউনিট। ভুলে যেতে বাধ্য করা হল যে এটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ আর গবেষণার প্রতিষ্ঠান। ফিল্ড হাসপাতাল নয়। বা জেনারেল হাসপাতাল নয়। আমরা কি সবাই নির্লিপ্ততা বা অজ্ঞতা বা অজুহাত বা নাজুকখোমড় সিনড্রোমে ভুগছি! আমাদের মাঝ থেকে মেধা, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শীতা কি হারিয়ে যাচ্ছে! মেডিকেল শিক্ষায় দীক্ষিত এবং একজন দায়িত্ববান পেশাজীবী সুনাগরিক এই আমি জাতি ও পেশার নিবেদিত প্রাণদের আমার আশংকা আর এসব অনাচার জানাতে বাধ্য হলাম।