এক বছরের ব্যবধানে দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই সাথে ধস নেমেছে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে। এ রকম পরিস্থিতি লাগাতার হলে বছর শেষে চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়নস ক্লাব থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটের
কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে গত বছর ৩১ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যন্ডলিং করে। এর আগের বছর কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউএস। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটের কারণে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে কন্টেনার হ্যান্ডলিং ১ লাখের বেশি কমে গেলেও চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়নস ক্লাবের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু চলতি বছর আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য কমে
যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণও দ্রুত কমছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বন্দর এবার থ্রি মিলিয়নস ক্লাব থেকে ছিটকে পড়বে। খালি কন্টেনারের সংখ্যা বাড়ছে। এটা আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক পরিস্থিতির বার্তা দিচ্ছে।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার ২০১ টিইইউএস। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৪২ টিইইউএস কন্টেনার। এক বছরের ব্যবধানে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কমেছে ৬৭ হাজার ৪৫৯ টিইইউএস বা ২৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত বছর
জানুয়ারিতে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৫২৬ টিইইউএস। এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮৭ হাজার ৯৮৪ টিইইউএস। কমেছে ৪৩ হাজার ৫৪২ টিইইউএস কন্টেনার বা ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ। গত
বছর আমদানি পণ্যের সাথে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছিল ৩ হাজার ৯৭০ টিইইউএস। এ বছর তা ১০ হাজার ৮৯২ টিইইউএসে উন্নীত হয়েছে। গত বছর জানুয়ারিতে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৭৩ হাজার ৫৪২ টিইইউএস। এবার রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৬২ হাজার
৭২৭ টিইইউএস। কমেছে ১০ হাজার ৮১৫ বা ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারের সাথে খালি কন্টেনার গত বছর হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৫৬ হাজার ১৬৩ টিইইউএস। রপ্তাণি পণ্য খালাস করে এসব কন্টেনার বিদেশে এমএলওর কাছে পাঠানো হয়েছিল। এবার তা নেমে এসেছে ৩৬ হাজার ১৭৯ টিইইউএসে।
চলতি বছরের জানুয়ারির চেয়ে ফেব্রুয়ারির পরিস্থিতি আরো খারাপ। ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪ টিইইউএস কন্টেনার। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ৮৬১ টিইইউএস। এক বছরের ব্যবধানে কন্টেনার
হ্যান্ডলিং কমেছে ৬৭ হাজার ৭৮৭ টিইইউএস বা ২৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে বন্দরে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৭৭ হাজার ৮৪১ টিইইউএস কন্টেনার। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৮৯ টিইইউএস। এক বছরের ব্যবধানে আমদানি কমেছে ৩৭ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস বা ৩২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
গত বছর আমদানি পণ্যের সাথে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩ হাজার ৯২১ টিইইউএস। এবার ফেব্রুয়ারিতে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ হাজার ১২৫ টিইইউএস। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৬৯ হাজার ৮২০ টিইইউএস। চলতি ফেব্রুয়ারিতে যা নেমে আসে ৫৬ হাজার ১৬৩ টিইইউএস। এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে ১৩ হাজার ৫৯৬ টিইইউএস বা ১৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি পণ্যের সাথে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৪৬ হাজার ৭৩১ টিইইউএস। চলতি ফেব্রুয়ারিতে যা নেমেছে ২৩ হাজার ৮৮৪ টিইইউএসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, আমদানি–রপ্তানি দুটোই কমেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বিদ্যমান ধারা অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি এমন একটি বিষয়, যাতে কারোর কিছু করার নেই। বৈশ্বিক সংকটের কারণে এমনটি হচ্ছে। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ না হলে কিংবা বৈশ্বিক মন্দা না কাটলে এর থেকে নিস্তার পাওয়া কঠিন।