চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত আবারো বিচারকশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে দুর্নীতির ৩২৬টি মামলার বিচারে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা আদালতটিতে থাকা মাদক, অস্ত্রসহ অন্যান্য মামলারও। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছে প্রসিকিউশন থেকে শুরু করে মামলার বাদী, এমনকি আসামি পক্ষও।
আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দুর্নীতির মামলার বিচারের জন্যই বিশেষ জজ আদালতের যাত্রা শুরু হয়। এটির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু দেখা যায়, হঠাৎ হঠাৎ আদালতটি বিচারকশূন্য হয়ে পড়ে। ২০১৫ সালে যোগদান করেন বিচারক মীর রুহুল আমিন। তিনি ৩ বছর দায়িত্ব পালন করে বদলি হয়ে যান। এরপর ২০১৯–২০ সালে দীর্ঘদিন বিচারক ছিল না এ আদালতে। এরপর ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল যোগদান করেন বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন শেষে তিনি গত মার্চ মাসে বদলি হয়ে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে যোগদান করেন। চট্টগ্রাম থেকে তিনি কঙাবাজারে বদলির কারণেই বর্তমানে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারক নেই। মামলার বিচারে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আকতার কবির আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশে যত বড় বড় সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দুর্নীতি। এ দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গঠিত আদালতে কিছু দিন পরপর বিচারক থাকবে না, সেটা অস্বাভাবিক। বিচার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরাধীরা সুযোগ পাচ্ছে। তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে না। বিচার বিলম্বের কারণেই এমনটা হচ্ছে। বিচারক শূন্যতার বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। তিনি আরো বলেন, বিচারক বদলি হওয়ার সাথে সাথে নতুন বিচারক যোগদান নিশ্চিত করতে পারলে বিচার প্রক্রিয়ায় একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে। অপরাধীরা ভয় পাবে।
আদালতসূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বর্তমানে দুর্নীতির মামলা রয়েছে ৩২৬টি। মাদক মামলা রয়েছে ২৪৮টি। অস্ত্র মামলা ২৭টি। ফৌজদারী আপিল রয়েছে তিনটি। দেওয়ানী বিষয়ে অপর আপিল মামলা রয়েছে ৫৪টি। মিছ আপিল রয়েছে সাতটি ও মিছ মামলা রয়েছে দুটি। সবমিলে আদালতটিতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৬৬৭ টি। আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ বদলির আগের তিন মাসে আদালতটিতে একতরফা নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা শূন্য, দোতরফা নিষ্পত্তি ৯টি ও অন্যভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে একটি মামলা। প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা যায়, বিশেষ জজ আদালতে বর্তমানে পাঁচ বছর ও পাঁচ বছরের অধিক বিচারাধীন রয়েছে এমন মামলার সংখ্যা সবমিলে ৪২৮টি। এর মধ্যে দুদকের মামলা ৮৭টি। মাদকের ২৪৮ ও অস্ত্র মামলা ২৭টি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আদালতটিতে থাকা মামলাগুলোর মধ্যে উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা ৬৫টি। এর সবকটিই দুর্নীতির মামলা তথা বিশেষ মামলা।
দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আজাদীকে বলেন, বিচারক বদলি হবে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু সাথে সাথে নতুন বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। সেটি না হওয়াই এখন আমাদের আদালতে বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। মামলার বিচারে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে জানিয়ে পিপি বলেন, বিচারক না থাকায় আমরা প্রসিকিউশন, মামলার বাদী, এমনকি আসামি পক্ষও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দ্রুত বিচারক নিয়োগ হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। এর আগেও গুরুত্বপূর্ণ এ আদালতে দীর্ঘদিন বিচারক না থাকার রেকর্ড রয়েছে। আমি জেনেছি আগামী সপ্তাহে নতুন বিচারক নিয়োগ হচ্ছে, তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয় উল্লেখ করে কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, আমাদের চাওয়া হচ্ছে, যেদিন বিচারক বদলি হবে এর পরদিনই নতুন বিচারক নিয়োগ হোক।