ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের আনন্দে যখন ভাসছিল সবাই তখন তামিম ব্যস্ত ছিলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখতে। দুই লাইনের এক স্ট্যাটাসে বাংলাদেশের সবচাইতে সফল ওয়ানডে অধিনায়ক জানিয়ে দিলেন “আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আজকে থেকে আমাকে অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে বিবেচনা করুন। ধন্যবাদ”। তার মানেটা পুরস্কার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের বিরতি নিয়ে দলের বাইরে থাকা তামিমকে নিয়ে যখন চলছিল নানা জল্পনা কল্পনা ঠিক তখনই সবকিছু পরিষ্কার করে দিলেন তামিম নিজেই। অথচ বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট শুধু নয়, সব ধরনের ক্রিকেটে সফলতম মানুষটির নাম তামিম ইকবাল। আর তিনিই কিনা নিজেকে সরিয়ে নিলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার উচ্ছ্বাসের আবহের মধ্যেই যেন বেজে উঠল ওয়ানডে অধিনায়কের বিদায়ের রাগিনী। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন তামিম ইকবাল। তামিমের এই ঘোষণা অবশ্য খুব বড় বিস্ময় হয়ে আসেনি। বরং গত কিছুদিন ধরে এটিকেই অবধারিত বলে মনে করছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট মহল। ২০২০ সালের ৯ মার্চ মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেছিলেন ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হওয়া তামিম ইকবাল । ইনজুরির কারণে কিছুদিন তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ফিট হলেও গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি নিজের ম্যাচ অনুশীলনের ঘাটতি ও তরুণদের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে। যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে তার অভিযোগের যেন অন্ত ছিলনা। ছিল ক্ষোভও।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে দলে তামিমকে ফেরানোর কথা ওঠে বেশ কয়েকবারই। স্বয়ং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও তার সঙ্গে কথা বলেন কয়েক দফায়। তবে তিনি ফেরেননি। বরং গত ২৭ জানুয়ারি বিপিএল চলার সময় জানিয়ে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে ৬ মাসের বিরতি নিচ্ছেন। সেই ৬ মাস শেষ হওয়ার দিন দশেক আগেই তামিম জানিয়ে দিলেন তিনি এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অবসরপ্রাপ্ত। বিদায় বলে দিলেন ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটটিকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম ৭৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে ২৪.০৮ গড়ে ও ১১৬.৯৬ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ১৭৫৮ । বেশ বর্নিল তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার। তবে দেশের হয়ে তিনি খেলেছেন ৭৪টি ম্যাচ। চারটি ম্যাচ খেলেছেন বিশ্ব একাদশের হয়ে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানও তিনিই। ২০১৬ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। ওই বিশ্বকাপে শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দল মিলিয়েই সর্বোচ্চ রান ছিল তার। দেশের হয়ে সবশেষ তিন টি-টোয়েন্টিতে তার রান যথাক্রমে ৩৯, ৬৫ ও ৪১। তবে কোভিড বিরতির পর আর এই সংস্করণে ফেরেননি তামিম। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ সময়টায় তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠছিল। তবুও তিনি বাংলাদেশের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান। তার অনুপস্থিতিতে বিকল্প কোনো ওপেনার এখনও দলের জন্য উঠে আসেনি। এবার তার আনুষ্ঠানিক বিদায়ে নিশ্চিত হলো উপযুক্ত ওপেনার খোঁজার সেই চ্যালেঞ্জ সামনেও থাকবে দলের জন্য। আর সে চ্যালেঞ্জে কতটা সফল হবে বিসিবি সেটা সময়ই বলে দেবে।