করোনাকালীন বছরটা ছাড়া প্রতি বছর শিশু-কিশোররা মেতে ওঠে নতুন বইয়ের উৎসবে। এমন সুযোগটা করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। সকলের প্রত্যাশা অন্য বছরের মতো এবারও সারাদেশের প্রতিটি স্কুলে শিশু-কিশোররা মেতে উঠবে নতুন বই পাওয়ার সীমাহীন আনন্দে। নতুন এই বই দেয়ার কারণ, নতুন বছরের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর জীবনে শুরু হয় নতুন শিক্ষাবর্ষও। শিক্ষাবর্ষ শুরুর এমন দিনে তাই সব শিক্ষার্থীর মনে থাকে নতুন কিছু পাওয়ার আশা। নতুন বই পেয়ে সেই আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নতুন বছরে সবার মধ্যে থাকে নতুন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা। বিশেষ বছরের প্রথম দিন যদি ভালো কিছু উপহার পাওয়া যায় তবে সারা বছরই মেলে ভালো কিছু! এমনটাই ধারণা অনেকের। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে মূল্যবান উপহার কী? এমন প্রশ্নে অনেকে হয়তো অনেক রকমের উত্তর দেবেন। অনেকে অনেক রকমের উত্তর দিলেও শেষ পর্যন্ত সবাই একবাক্যে মেনে নেবেন পৃথিবীতে সবচেয়ে মহামূল্যবান উপহার হলো বই। কেননা আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় বই ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করাও সম্ভব নয়। কারণ বই মানুষের মনের দুয়ার খুলে দেয়। প্রসারিত করে জ্ঞান ও বুদ্ধিকে। মানুষকে চেনা বা মনুষ্যত্ব অর্জনের বড় পাঠও পাওয়া যায় বইয়ের মাধ্যমে। সহজ কথায় বই মানুষের জীবন ব্যবস্থায় একটি অপরিহার্য উপাদান। বই মানুষকে আলোকিত করে। আর সেই আলোয় নিজে যেমন আলোকিত হন, তেমনি আলোকিত হয় পৃথিবী।
তবে এবারে বছরের প্রথম দিন সবার বই পাওয়া নিয়ে সন্দিহান আছেন অনেকে। গত ২৫ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে একটা রিপোর্ট বের হয়। ‘মাধ্যমিকের শতভাগ বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা চট্টগ্রামে’ শীর্ষক এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আর ক’দিন পরই নতুন বছর। আরো একটি নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু। নতুন বছর মানেই নতুন ক্লাস, আর নতুন বইয়ের উৎসব। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। উৎসব আমেজে নতুন বই হাতে পাওয়ার লোভে বছরের প্রথম দিনটির জন্য অপেক্ষায় সারাদেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থী। বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে এরইমাঝে প্রস্তুতি চলছে দেশজুড়ে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকে চট্টগ্রামেও নতুন বই আসা শুরু হয়েছে। তবে নতুন বছরের আর মাত্র ৫ দিন বাকি থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় অর্ধেক বই এখনো পৌঁছেনি চট্টগ্রামে। গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চাহিদার ৫১ শতাংশ বই পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। হিসেবে চাহিদার ৪৯ শতাংশ (অর্ধেক) বই এখনো বাকি। এতে করে নতুন বছর শুরুর আগে মাধ্যমিক পর্যায়ের শতভাগ বই পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামে। যদিও নতুন বছরের আগেই অধিকাংশ বই পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরী। জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে চাহিদার অনেক বই এখনো বাকি। তবে এ বিষয়ে আমি এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। ডিসেম্বরের মধ্যেই অধিকাংশ বই পৌঁছে যাবে বলে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত প্রশংসাপূর্ণ কাজ। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে যে ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়, তা কষ্টদায়ক ও দুঃখজনক।
নতুন বছর শুরুর এমন আনন্দের প্রথম দিনে আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের মাঝে আনন্দের মাত্রা আরো বেড়ে যায় নতুন উপহার পেয়ে। এ সময় নতুন বইয়ের ঘ্রাণ সবার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ দেয়। বছরের প্রথম দিন শিশু-কিশোররা খালি হাতে স্কুলে গিয়ে ফিরে আসে নতুন বই নিয়ে। যে বই তাকে আগামী এক বছর ব্যস্ত রাখবে নতুন জ্ঞানের পরিচিতিতে। এমন আনন্দপূর্ণ পরিবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি কারো প্রত্যাশিত নয়। সবার হাতে বই পৌঁছাতে পারলেই সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে।