কুয়েতে গ্রেপ্তার সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় জামিন পেয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে আত্মসমর্পণ করে তারা জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকালে তাদের জামিন দেন বিচারক।
এদিকে সাংসদ পাপুল এবং তার পরিবারের সদস্যদের ৬১৭টি বাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত। সেইসঙ্গে পাপুলদের ৯২টি তফসিলভুক্ত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করারও নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় দুদকের করা আবেদনের শুনানি করে রোববার বিচারক এই আদেশ দেন। এছাড়া পল্টন থানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) করা অর্থ পাচার মামলাতেও পাপুল, তার প্রতিষ্ঠানসহ আটজনের ৫৩টি হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন একই বিচারক। তাদের আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ বলেন, আসামিদের নামে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই, আর তারা পালাবেন না। সেলিনা সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। তার মেয়ে ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েন।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পাপুল অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ১১ নভেম্বর তার এবং তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তাতে অভিযোগ করা হয়, পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
এছাড়া কাগুজে প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জেসমিন পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। এসব কাজে পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেন উল্লেখ করে তাদেরও আসামি করা হয়।
মামলায় জেসমিনের বিষয়ে বলা হয়, তিনি শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় বোন সেলিনা ও দুলাভাই পাপুলের অবৈধ অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিং করে বৈধতায় রূপ দিতে ‘লিলাবালি’ নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বিভিন্ন ব্যাংকে তার প্রায় ৪৪টি হিসাব পাওয়া গেছে। যেখানে শুধুমাত্র এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেই রয়েছে ৩৪টি এফডিআর হিসাব। আসামি শহিদ ইসলাম পাপুল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন বিধায় এই সুবিধা গ্রহণ করতে তার কোনো বেগ পেতে হয়নি।
পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এরপর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে গত ১১ নভেম্বর মামলাটি করেন।