দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, সাংবাদিকতা মহান একটি পেশা। সমাজের ভালো করার, মানুষকে ভালোবাসার বহুমুখী সুযোগ এই পেশায় রয়েছে। আর মানুষকে ভালোবেসে এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দৈনিক আজাদী কার্যালয় পরিদর্শনে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল শিক্ষার্থীর উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। একাডেমিক কাজের অংশ হিসেবে চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র আজাদীর কার্যালয় পরিদর্শন করতে আসেন।
আজাদী সম্পাদক বলেন, বলা হয় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। মূলত বস্তু কোনো সংবাদ লিখে না। সংবাদ লিখে মানুষ। প্রত্যেকটা সংবাদের পিছনে একজন মানুষের হাত থাকে। যেকোনো ঘটনা ঘটলে সেটা সংবাদ। সেক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে সেটা লিখতে হবে। একজন রিপোর্টার যাচাই বাছাই করে সংবাদটি পরিবেশন করে থাকেন। অন্ধভাবে কাউকে সমর্থন করে সংবাদ পরিবেশন করলে সেটা হবে না। মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আস্থার জায়গায় থাকতে হলে নিজেকে মানুষের পাশেই রাখতে হবে। কোনো দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করলে গণমানুষের মুখপত্র হওয়া সম্ভব হবে না।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক তাঁর ৬৩ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের নানা ঘটনার কথা শিক্ষার্থীদের শোনান। তিনি আজাদীর প্রকাশনার প্রেক্ষাপট এবং মুক্তিযুদ্ধকালে দৈনিক আজাদীর প্রকাশনা এবং পরে ১৭ ডিসেম্বর সকালে দেশের একমাত্র দৈনিক হিসেবে পত্রিকাটি প্রকাশিত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের জীবনে সততার সাথে লেগে থাকার গল্প শোনান। তাদেরকে মানুষের মতো মানুষ হওয়ারও পরামর্শ দেন।
সাংবাদিকতা বিভাগের ৬০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল আজাদী কার্যালয় পরিদর্শন করতে আসে। তাদেরকে পত্রিকার রিপোর্টিং ডেস্ক, সম্পাদনা ডেস্ক এবং বিজ্ঞাপন ডেস্কসহ পুরো অফিস ঘুরিয়ে দেখানো হয়। শিক্ষার্থীরা পত্রিকা প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।
এ সময় উপস্থিত দৈনিক আজাদীর সুহৃদ ইঞ্জিনিয়ার সুশান্ত দাশগুপ্ত বলেন, মানুষের জীবন নানা ইজমের উপর ভর করে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে হলে সর্বাগ্রে আপনাকে ন্যাশনালিজমকে গুরুত্ব দিতে হবে। আপনার দেশপ্রেমই আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বড় নিয়ামক হয়ে উঠবে।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২০২ নম্বর কোর্স শিরোনাম হলো, সংবাদ সংগ্রহ ও লিখন (ব্যবহারিক)। একাডেমিকভাবে কীভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে হবে এবং লিখতে হবে সেটা শিখানো হয় এই কোর্সে। শিক্ষার্থীদের হাতে–কলমে শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবহারিক কাজ সম্পন্ন করালেও বাস্তবিকভাবে একটি দৈনিক পত্রিকা কীভাবে সংবাদ গ্রহণ, বাছাই এবং সর্বশেষ ছাপানোর কাজ করে সেটা অনেকের অজানা। সেই কাজগুলো সরাসরি দেখানোর জন্য এ উদ্যোগ নেন কোর্স শিক্ষক ও বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নীপু। এ সময় দৈনিক আজাদীর সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানেরা উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
শিক্ষার্থী মো. রিয়াদ বলেন, ৮৩ বছর বয়সেও দৈনিক আজাদী সম্পাদক ১৮ ঘণ্টা পত্রিকার বিষয় দেখাশোনা করেন। বিষয়টা আমার কাছে আশ্চর্য লেগেছে।
আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর বলেন, সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পালাবদল হয়েছে। দীর্ঘ ৬৩ বছরে অনেক বাধা এসেছে। নানা প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে টিকে আছে আজাদী।
সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নীপু বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধসহ দেশের নানা আন্দোলন–সংগ্রামে আজাদীর অবদান আছে। আজাদী অফিসে এ রকম সুন্দর পরিবেশে আসতে পেরে আমরা আনন্দিত।
শিক্ষার্থীদের পত্রিকা ছাপা হয়ে হকারের হাতে পৌঁছানোর বিষয়টি দেখান আজাদীর ম্যানেজার মইনুল আলম বাদল।