করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলা বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ খানিকটা কমেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার আকুর ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের বিল শোধের পর রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলারে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের বিল পরিশোধ করতে হবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগেই বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৪২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে প্রত্যাশা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বিডিনিউজকে বলেন, আকুর দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ছেই। বিদেশি ঋণ-সহায়তার ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। অক্টোবরে রপ্তানি আয়ে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিলেও আগামীতে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি বছরের মধ্যেই আমাদের রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করবে। আর ২০২১ সালের মধ্যেই রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে একের পর এক রেকর্ড গড়ে গত ২৯ অক্টোবর অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ৪ নভেম্বর রিজার্ভ ছিল ৪১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। আকুর দেনা পরিশোধের পর বৃহস্পতিবার তা ৩৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিযানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে বর্তমানের এই রিজার্ভ দিয়ে দশ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, এক বছর আগে ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। মূলত রেমিটেন্সের উপর ভর করে সেই রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ৭ সেপ্টেম্বর আকুর জুলাই-অগাস্ট মাসের ১ বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ৩৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। ২০ সেপ্টেম্বর তা ফের ৩৯ বিলিয়ন ডলারের উপরে ওঠে। ৮ অক্টোবর তা আরও বেড়ে ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৯ অক্টোবর তা ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৮৮২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। এই চার মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এক হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের একই সময়ের প্রায় ১ শতাংশ বেশি। তবে সর্বশেষ অক্টোবর মাসে গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ৪ শতাংশ আয় কম হয়েছে। অর্থবছরের তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিদেশি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই তিন মাসে ১৩৮ কোটি ৫০ ডলার এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। অপরদিকে এই তিন মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বেশ কিছু দিন ধরে যে রিজার্ভ বাড়ছে তাতে এই আমদানি কমাও একটি কারণ বলে মনে করেন অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বিডিনিউজকে বলেন, আমদানি ব্যয় কমার একটি নেতিবাচক দিক কিন্তু আছে। বিনিয়োগ কমে যায়। কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।