অননুমোদিত হাসপাতাল, ক্লিনিক অবশ্যই বন্ধ করতে হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

| বুধবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

অবৈধ ও অননুমোদিত সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে অনেক সমস্যা রয়েছে, বিষয়টি তিনিও জানেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমি বলেছি দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় দেব না। এই অননুমোদিত, লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল এগুলো চলতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি আমি এক দিনে পারব না। কিন্তু আমার মেসেজ হচ্ছে যে, এই অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী এগুলোর জন্য। খবর বিডিনিউজের।

১৯৮২ সালের মেডিকেল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটিত হওয়ার পর জানা গিয়েছিল, অনুমোদন ছাড়াই চলছিল ওই হাসপাতাল। ২০২০ সালের নভেম্বরে ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর জানা যায়, ওই হাসপাতালও সেবা দেওয়ার অনুমোদন পায়নি। এরপর সারা দেশে অনুমোদিত এবং অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভাগীয় কার্যালয়গুলো পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিকডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই তালিকায় সারা দেশের ১১ হাজার ৯৪০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের নাম আসে, যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং যথাযথ সুযোগসুবিধা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছিল সে সময়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সে সময় বলেছিল, ওই তালিকার মধ্যে ২ হাজার ৯১৬টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্সের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। ৯ হাজার ২৪টি হাসপাতালক্লিনিকের মধ্যে কোনো কোনোটি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করলেও এখনও অনুমোদন পায়নি। আবার কোনো কোনোটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেই অর্থে সেগুলোও অবৈধ। অনুমোদনহীন যেসব চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র তখন চিহ্নিত করা হয়েছিল, তার মধ্যে ৩ হাজার ৫৩৫টি ছিল ঢাকা বিভাগে, ২ হাজার ২৩২টি চট্টগ্রাম বিভাগে, ১ হাজার ৫২৩টি খুলনা বিভাগে, ১ হাজার ৪৩৮টি রাজশাহী বিভাগে, ১ হাজার ৯৯টি রংপুর বিভাগে, ৯৬৩টি ময়মনসিংহ বিভাগে, ৬০৩টি বরিশাল বিভাগে এবং ৫৪৬টি সিলেট বিভাগে। ওই তালিকা হওয়ার পর কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে আড়াই হাজারের মত অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভিন্ন ক্লিনিককে জরিমানাও করা হয়।

এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তখনকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দাবি করেন, অনুমোদনহীন কোনো ক্লিনিকহাসপাতাল ঢাকায় আর ‘চালু নেই’। ঢাকা মহানগরীতে অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৪৮৪টি বলেও সে সময় তথ্য দেন জাহিদ মালেক। কিন্তু চলতি জানুয়ারিতে খতনা করাতে গিয়ে আয়ান আহমেদ নামে এক শিশুর মৃত্যুর পর জানা যায়, ঢাকার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতাল অনুমোদন ছড়াই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। ওই ঘটনার পর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আয়ানের পরিবারের সদস্যরা মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে দেখা করেন। তারা আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন, আইন অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা তিনি নেবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহ্নীলায় দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর গোলাগুলি, নিহত ১
পরবর্তী নিবন্ধএলাকার উন্নয়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা