অতি বিপন্ন বৈলাম বৃক্ষের টিকে থাকা

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | শনিবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের অতিবিপন্ন উদ্ভিদগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দেশের সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষ বৈলাম। এক সময় দেশের সমতল ভূমি এলাকায় বৈলাম গাছের উপস্থিতি থাকলেও এখন খুব একটা দেখা মেলে না। ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তন, নির্বিচারে নিধনসহ নানা কারণেই বিলুপ্তির পথে এই বৃক্ষটি। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে এখনো প্রাকৃতিকভাবে কিছু বৈলাম বৃক্ষ টিকে আছে। রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই ও বিলাইছড়ির সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কিছু সংখ্যক বৈলাম গাছের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে বন বিভাগের নিজস্ব নার্সারিতেও।

জানা গেছে, বৈলাম বড় আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ। উচ্চতায় ৩০ থেকে ৪৫ মিটার। অনেকে এটিকে আকাশ ছোঁয়া বৃক্ষও বলে থাকেন। বুক সমান উচ্চতায় একটি বৈলাম গাছের বেড় ১২০১৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই গাছের প্রধান কাণ্ড সরল ও সোজা; অনেকটা নলাকার আকৃতির। নিচের দিকটা ডালকাণ্ডবিহীন।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকাশিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষ পরিচিত’ বই থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষ বৈলাম স্থানীয় পর্যায়ে বইলাম নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম গধংপধষ ড়িড়ফ ঃৎবব, বৈজ্ঞানিক নাম অহরংড়ঢ়ঃবৎধ ংপধঢ়যঁষধ; এটি উরঢ়ঃবৎড়পধৎঢ়ধপবধব গোত্রের উদ্ভিদ। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় পাওয়া যায়। আইইউসিএনের লাল তালিকায় বৈলাম বিশ্বব্যাপী একটি মহাবিপদাপন্ন প্রজাতির গাছ। বন উজাড়, মাতৃবৃক্ষের অপ্রতুলতা ও অতিরিক্ত কাঠ আহরণের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে বৈলাম গাছ দুষ্প্রাপ্য ও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সাধারণত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলার, কাপ্তাই, বিলাইছড়ির সংরক্ষিত বন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নার্সারি এটি সংরক্ষণ করছে।

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২এর তফসিল ৪ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৫৪টি উদ্ভিদকে সংরক্ষিত উদ্ভিদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, এই ৫৪ প্রজাতির উদ্ভিদ ইচ্ছাকৃতভাবে ওঠানো, উপড়ানো, ধ্বংস বা সংগ্রহ করা যাবে না। সংরক্ষিত উদ্ভিদের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষ বৈলাম। এই আইন অমান্য করলে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আবার পুনরায় একই অপরাধ করলে শাস্তি দ্বিগুণ।

সমপ্রতি রাঙামাটি জেলার ভেদভেদী এলাকায় অবস্থিত বন বিভাগের নার্সারিতে গিয়ে একটি বৈলাম বৃক্ষের সন্ধান পাওয়া যায়। গাছের নিচে কিছু সংখ্যক বৈলাম বৃক্ষের বীজ দেখা গেছে। বন কর্মকর্তারা জানান, সেটি মূলত মাঝারি আকৃতির একটি বৃক্ষ। বৈলাম গাছের বীজ দুটি বড় ডানা বিশিষ্ট; যা বীজকে বেশ দূরে উড়ে যেতে সহায়তা করে এবং প্রাকৃতিকভাবে বংশবিস্তার সহজ হয়। বীজের আয়ুষ্কাল কম হওয়ায় বীজ গাছ থেকে ঝরে পড়ার দুইএক দিনের মধ্যেই রোপণ করতে হয়।

বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙামাটির অধিক্ষেত্রাধীন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের কাপ্তাই রেঞ্জ, কর্ণফুলী রেঞ্জ এবং বিলাইছড়ির আলীখিয়ং রেঞ্জ ও ফারুয়া রেঞ্জে এখনো বিক্ষিপ্তভাবে বেশ কিছু বৈলাম গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও কর্ণফুলী রেঞ্জের অ্যাসিস্ট্যাট ন্যাচারাল রিজেনারেশন বাগানে বেশ কিছু পরিমাণ বৈলাম চারা রোপন করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির ঝুলন্ত সেতু আরো নান্দনিক হচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধকী নেই জব্বারের বলীখেলা ঘিরে বৈশাখী মেলায়