অতঃপর

মোহিনী সংগীতা সিংহ | বুধবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

আমি একদিন অনেক শুকিয়ে যাব।
ঝরাপাতার মত আমার রঙগুলো
এক সময়ের বসন্তকে প্রমাণ করতে করতে
ঝরে পড়বে মাটিতে।
তবুও আমি বোঝাব সেই বসন্তের কথা
যে বসন্তে সমস্ত রঙ নিয়ে
নিছক খেলায় মেতেছিলে তুমি।
আমি একদিন ক্ষরার ফাটল হব।
ফেটে ফেটে মাটির বুকজুড়ে
কষ্ট বিছিয়ে দিতে দিতে
আমি বলব এক বর্ষার উদ্বেলিত বন্যার কথা।
যে বন্যার ঢেউয়ের ভার তুমি বইতে পার নি।
জলশূন্য হওয়ার অভিশাপ দিয়েছিলে আমাকে।
একদিন আমি বরফের মত তুমুল সুখ হব।
তুষার হয়ে ঝরে ঝরে পড়ব
তোমার মাথায়, গলায়, বুকে।
শীতল সুখের ভীষণ জেদে
নীরবে জব্দ করব তোমার অহংমত্ত কলিজা।
সমস্ত রক্ত নিঙরে নেব।
ভোরের কোমল রোদ পাটিতে
সেই কলজে শুকিয়ে নিলেই
সে হবে সোঁদা মাটির মত!
আমার হৃদয় থেকে ভীষণ ভালোবাসাগুলো
সেই সাদা, সোঁদা কলজের পরতে পরতে
বিছিয়ে দেব। মিথ্যে মোমের প্রলেপ দেব
কলিজার কিনারে কিনারে।
অতঃপর সৃষ্টি হবে আমার তুমি!
এরপর আমি অচিন্তন বনমালী হব।
ফুল ফুটলে আর ভাবব না।
কারণ? তুমি তখন ঘুরে বেড়াবে
ফেরারী আসামী হয়ে,
ভবঘুরে হয়ে, পৃথিবীর আষ্টেপৃষ্ঠে।
সামলাতে পারবে না
তোমার ভেতরের অসম্ভব ফারাক্কাকে।
দিতে পারবে না বাঁধ।
প্রেমের উষ্ণতা যখন গলিয়ে দেবে
মোমের প্রলেপ,
কলিজার কিনারে কষ্টের কাঁপন
উন্মাদ করে তুলবে তোমায়।
ভালোবাসার কষ্ট যে ব্লেডের পাতের চেয়েও
তীক্ষ্ণ,গভীর দাগ কাটে, তা তুমিও বুঝবে।
একাকী ডাহুকের মত তুমি
ঠোঁট গুঁজে মরার জন্য
খুঁজে বেড়াবে পলি মাটির ঢিবি।
অথচ তোমার পৃথিবীতে তখন
হেসে লুটোপুটি খাবে ক্ষরার ধুলিঝড়।
আমি তখন বাবুই হব।
খড়কুটো কুড়িয়ে একটা একরুমের
খুপড়ি বানাব।
নিশুত রাতে
বিলের বুক থেকে জোনাক এনে
জ্বালিয়ে রাখব সেই খুপরি বাসায়।
অপেক্ষা করব তোমার,
তোমার কলিজায় বসন্ত ফুটলে
সমাপ্ত হবে তোমার ফেরারী জীবন।
তারপর বর্ষা, বসন্ত, শীত,
বনমালীর ফুলের বাগান হবে
জোনাকীদের অভয়ারণ্য!

পূর্ববর্তী নিবন্ধসদ্য ঘোষিত রেমিট্যান্স প্রণোদনা ও সূক্ষ্ম চিন্তা
পরবর্তী নিবন্ধবেগম মুশতারী শফী : নারী প্রগতির অনন্য দীপশিখা