চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পশ্চিমাংশের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বেশ কিছু কাঁচা বাড়িঘর পানির স্রোতে ভেঙে পড়েছে বলে জানা গেছে।
কয়দিনের প্রবল বর্ষণে একদিকে বঙ্গোপসাগর ও জলকদরখাল, শঙ্খ নদীর অতিরিক্ত পানি জমায়েত হওয়া, অপর দিকে পাহাড় থেকে বাঁশখালীর ১০/১২ ছড়া হয়ে পানি নামতে থাকায় উপজেলা প্রশাসন সূত্র মতে ১০ থেকে ১২ হাজার বাড়িঘর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা যায়।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ১২/১৩ শত পুকুর ও বেশ কিছু মৎস্য ঘের ডুবে গেছে।পাহাড়ি ঢলে পৌরসদরের জলদী, বৈলছড়ি, চাম্বল, শীলকূপ, কালীপুর, সাধনপুর এলাকা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শঙ্খ নদী ও বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানি উঠে সাধনপুর, পুকুরিয়া, শীলকূপ, ছনুয়া, সরল, গণ্ডামারা, শেখেরখীল, কাথরিয়া, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, চাম্বল,পুঁইছড়ি এলাকায় ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়।
বাঁশখালীর পূর্বে পাহাড় আর পশ্চিমে সাগর উপকূল হওয়াতে পূর্বের পাহাড়ি ঢলের সব পানি পশ্চিমে গিয়ে জমায়েত হওয়াতে রাস্তাঘাট, পুকুর-ডোবা সর্বত্র এখন পানিতে থৈ থৈ করছে।
এছাড়া বাঁশখালীর মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলকদর খালে ও প্রবল বর্ষণের ফলে অতিরিক্ত পানি জমায়েত হওয়াতে সহজে পানি নিচে নামতে পারছে না। এছাড়া সমতল থেকে পানি খালে ও নদীতে নামার বেশ কিছু কালভার্ট থাকলেও সেগুলোর অধিকাংশ নষ্ট ও অকেজো বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।
তাছাড়া প্রবল বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবাহের নানা সমস্যা হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন জনপ্রতিনিধিরা। এমনকি দুর্যোগকালীন সময়ে উপজেলা পরিষদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সভায়ও তাদের কোনো প্রতিনিধি আসে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
শীলকূপের চেয়ারম্যান কায়েশ সরওয়ার সুমন বলেন, “আমার ইউনিয়নে একদিকে পাহাড়ি ঢল অপরদিকে প্রবল বর্ষণের ফলে সর্বত্র পানি আর পানি। এমনকি আমার ইউনিয়ন পরিষদও জলমগ্ন রয়েছে।”
শেখেরখীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুল ইসলাম ফারুকী বলেন, “আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। তাছাড়া জলকদর খালের কিছু ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কাজ চলমান থাকলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ ও তাদের কোনো কর্মকর্তার দেখা মিলছে না।”
সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কেএম সালাহ উদ্দিন কামাল বলেন, “পাহাড়ি ঢল, শঙ্খ নদীর ভাঙন ও জোয়ারের স্রোতে আমার এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া পশ্চিম বৈলগাঁও এলাকায় পানি জমা থাকায় সাধারণ জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে।”
বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, “পাহাড়ি ঢলের কারণে আমার ইউনিয়নে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।”
বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, “অতিরিক্ত পানি জমার কারণে আমার এলাকায় কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে।”
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম বলেন, “কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে বাঁশখালীর ছনুয়া, শেখেরখীল, গণ্ডামারা, সরল, খানখানাবাদ, সাধনপুর, পুকুরিয়া সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ১২/১৩ শত পুকুর ডুবে গেছে।”
এছাড়া বেশ কিছু মৎস্য ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে মৎস্যচাষীদের সূত্রে জানা গেছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, “বর্তমানে ১৮শ’ হেক্টর আউশ, ৬৮০ হেক্টর আমন বীজতলা, ৫৫০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি, ২৫০ হেক্টর আগাম টমেটো ক্ষেত, প্রায় ২৫০ হেক্টর পেঁপে ও আমন ক্ষেত পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব পানি কমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা যাবে।”
তবে সবজি ক্ষেতের প্রচুর ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “কয়দিনের প্রবল বর্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে চাষীরাসহ সব সেক্টরে। ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে জনপ্রতিনিধিরা কাজ করছে। পানি কমে গেলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা সঠিকভাবে নিরুপণ করা যাবে।”