ছয় মাস না যেতেই দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির বিল। ওয়াসা বলছে, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নেওয়া ঋণ পরিশোধে বিলের সমন্বয় করতেই এটা করতে হয়েছে।
ওয়াসার সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ইউনিট পানি উৎপাদনে চট্টগ্রাম ওয়াসার খরচ ২৭ টাকা কিন্তু বর্তমানে আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ১৩ টাকা ও বাণিজ্যিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৩১ টাকা ৮২ পয়সা। নতুন দাম কার্যকর হলে আবাসিক গ্রাহকদের পানির দাম হবে ১৮ টাকা ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের পানির দাম হবে ৩৭ টাকা।
পানির দাম বাড়ানোর পেছনে কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ দাবি করেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “পানির দাম বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে যেসব ঋণ নেওয়া হয়েছে তা আগামী ২০২৩ সাল থেকে পরিশোধ করতে হবে। যদি পানির দাম বাড়ানো না হয় তাহলে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই ক্রমান্বয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে।”
এমডি বলেন, “যেহেতু উৎপাদন খরচ থেকে বিক্রি দামের তারতম্য প্রায় ১৩-১৪ টাকা, চাইলেও আমরা একসঙ্গে অনেক বেশি দাম বাড়াতে পারব না। তাই ধাপে ধাপে দাম বাড়ানো হচ্ছে।”
সামনে এ দাম আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, “বিদেশী তিন সংস্থা থেকে চার প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭ হাজার ১১৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা ঋণ নেয় ওয়াসা। বাস্তবায়ন করা এসব প্রকল্পের মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প-১ বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে জাইকা ৭৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা অর্থায়ন করে। চুক্তি অনুযায়ী এ প্রকল্পে নেওয়া ঋণের ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে ওয়াসাকে। এছাড়া, চলতি বছর উদ্বোধন হওয়া শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প-২ বাস্তবায়নে ব্যয় হয় চার হাজার ৪৯১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এতে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ তিন হাজার ৬২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এতে ওই সংস্থাটিকে ০.০১% হারে সুদ দিতে হবে। ওয়াসার আরেক প্রকল্প শেখ রাসেল পানি শোধনাগার নির্মাণে ব্যয় হয় ১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংক ১ হাজার ৪৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা দেয়। অন্যদিকে ওয়াসার বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন আরেক প্রকল্প ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগারের ব্যয় প্রায় ১ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণদাতা সংস্থা কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে।
পানি শোধনাগার প্রকল্প ছাড়াও চট্টগ্রাম ওয়াসার বাস্তবায়নাধীন পানি সরবরাহ ও পয়নিষ্কাশন (স্যুয়ারেজ) প্রকল্প-১ এর কাজ চলছে।
হঠাৎ পানির দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নগরীর সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে বাড়তি পানির দাম মানুষের জন্য নতুন বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।