রাঙ্গুনিয়ায় গরুর রশি খুলে নেয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে দুই ভাই খুন হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।
শুক্রবার দিনগত রাত দুইটার দিকে নিহতদের বাবা জহির আহমেদ বাদী হয়ে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় খোরশেদ আলমকে প্রধান করে ৪ জনকে আসামী করা হয়। তাদের মধ্যে গ্রেফতার দু’জনকে আজ সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে জেল হাজাতে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বাড়ির কাছে ক্ষেতের পাশে জালাল উদ্দিন তার গরুকে মাঠে ঘাস খেতে বেঁধে দিয়ে আসেন। দুপুরের দিকে গিয়ে দেখেন, তার গরুর গলার রশি কারা খুলে নিয়ে গেছে। খুঁজতে গিয়ে দেখেন, রশিটি শফিকুল ইসলামের হাতে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হলে শফিকুলের মাথায় আঘাত লেগে ফেটে যায়। এর জেরে বিকেলের দিকে শফিকুল ইসলামের তিন ছেলে খোরশেদ আলম, মোরশেদ আলম ও সাইফুল মিলে জালাল উদ্দিনের ওপর হামলা চালায়।
এ সময় তাকে বাঁচাতে ভাই কামালসহ প্রতিবেশী ইদ্রিছ ও তার সন্তানরা এগিয়ে আসেন। তখন প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে জালাল ও কামাল আহত হন। এ ছাড়া মারধরে আহত হন ইদ্রিছ ও তার তিন ছেলে।
বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম খুরুশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সবাইকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক জালাল ও কামালকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তাহেরাতুল আশরাফী বলেন, “হাসপাতালে আনার আগে দু’জন মারা যান। বাকি ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদেরও বুকের বাম পাশে জখম রয়েছে। তাদের মধ্যে ইদ্রিছের অবস্থা আশংকাজনক। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।”
নিহতরা হলেন জালাল উদ্দিন (২৫) ও তার ছোট ভাই কামাল হোসেন (২২)। তারা একই এলাকার জহির আহমেদের ছেলে। এ ঘটনায় আহতরা হলেন নিহতদের প্রতিবেশী মো. ইদ্রিছ এবং তার তিন ছেলে মো. বাদশা, সালাউদ্দিন ও মো. রানা।
ঘটনার পর অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে ধরে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তারা হলো শফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে খোরশেদ আলম। তাদের বাড়িও ওই এলাকায়।
অন্যদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে আজ শনিবার বিকাল ৫টার দিকে নিহত জালাল ও কামালের নামাজের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল ইসলাম বলেন, “জালাল ও কামালকে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত পিতা শফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে খোরশেদ আলমকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যরা পলাতক রয়েছে। হত্যা কাজে ব্যবহৃত ছুরিটাও জব্দ করা হয়েছে। পলাতক আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”
ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার নিহত জালাল ও কামালের মরদেহ আনা হলে শোকের পরিবেশ নেমে আসে এলাকাজুড়ে। নিহত জালালের স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। মরদেহ দু’টি বাড়ির আঙ্গিনায় নিয়ে আসা হলে নিজ কন্যা সন্তানকে নিয়ে স্বামীর মরদেহের পাশে বসে স্ত্রী এবং তাদের পিতা-মাতা আহাজারিতে ফেটে পড়েন।
স্থানীয় দোকানদার নুরুল কবির বলেন, “সামান্য একটি রশি নিয়ে এমন হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না। আমরা হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি এবং দ্রুততম সময়ে যেন পলাতক বাকি দুই আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।”