রেলের নতুন ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালুর দিনই সাইটটি ‘সাইবার আক্রমণের’ শিকার হয়েছে বলে দাবি করেছে নতুন সার্ভিস প্রোভাইডার সহজ লিমিটেড।
ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। টিকেট তো দূরের কথা নতুন ওয়েবসাইটটিতে ঢোকাই যাচ্ছে না।
তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, সাইবার আক্রমণের কথা তাদের জানা নেই। তারা জেনেছেন, টিকেট কাটার চাপে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এতদিন রেলের কম্পিউটারাইজড টিকেটিংয়ের কাজটি করে আসছিল ‘সিএনএস’ নামের একটি কোম্পানি। এখন সেই কাজ পেয়েছে সহজ, সিনেসিস ও ভিনসেন জয়েন্ট ভেঞ্চার। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই ভেঞ্চারের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
গত ১৪ মার্চ রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্ভিস প্রোভাইডার পরিবর্তন এবং নতুন কোম্পানির দায়িত্ব নেওয়ার জটিলতায় ২১ থেকে ২৫ মার্চ অনলাইনে ট্রেনের টিকেট বিক্রি বন্ধ থাকবে। এই ক’দিন কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি করে ২৬ মার্চ থেকে নতুন ব্যবস্থাপনায় টিকেটিং চালু হবে।
আজ শনিবার (২৬ মার্চ) সকাল ৮টায় ই-টিকেট বিক্রি শুরু হয় কিন্তু শুরুতেই ওটিপি, ওয়েবসাইট লোডিং ও সার্ভারে সমস্যাসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়।
দিনভর তা নিয়ে সমালোচনার পর সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও রেলের ই-টিকেটের নতুন ওয়েবসাইটে ঢোকা যাচ্ছিল না।
শুরুর দিনই অচলাবস্থা নিয়ে সহজ’র জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক ফারহাত আহমেদ বলেন, “আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করছেন। দ্রুত ই-টিকেটিং সিস্টেমটা সচল করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু অনলাইনে এই অচলাবস্থাটা তৈরি হয়েছে কিন্তু বিভিন্ন স্টেশনে কম্পিউটারাইজড প্রোগ্রামে কোনো সমস্যা হয়নি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমরা দেশের ৭৭টা স্টেশনে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে প্রায় ৪১ হাজার টিকেট বিক্রি করেছি।”
তিনি ‘সাইবার হামলার’ কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান।
আদৌ সাইবার হামলা নাকি কারিগরি অন্য জটিলতা-এ প্রশ্নের উত্তরে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, “এই কথাটা প্রথম শুনলাম, সাইবার হামলার কথা শুনিনি। সকালে শুনেছি কিছু সমস্যা হয়েছে। আমাদের জানানো হয়েছে, প্রায় দুই লাখ মানুষ এক সাথে টিকেট কাটতে ঢোকায় ক্যাপাসিটির সমস্যা হয়েছে। তাদের (সহজ) বলা হয়েছে, তারা কাজ করছে।”
রেলওয়ের উপ-পরিচালক (টিসি) নাহিদ হাসান খাঁন বলেন, “নতুন সিস্টেমে অনলাইন টিকেটিং সকাল ৮টায় চালু হয়েছে। কেউই পায়নি এমনটা নয় তবে অনেকেই পায়নি এটা ঠিক। আগের সিস্টেমে প্রায় ৪০ লাখের উপর রেজিস্ট্রেশন করা ছিল। তাদের আবার নতুনভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে, তাই সার্ভারে চাপটা একটু বেশি পড়ে গেছে। মাঝে মাঝেই সার্ভার ডাউন হচ্ছে, আবার কিছুক্ষণ পর পর ঠিকও হয়ে যাচ্ছে। আর আজকে প্রথমদিন, একটু সমস্যা হবেই। তার মানে এই নয় যে টিকেটিং বন্ধ আছে।”
সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না-জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, “এটি সম্পূর্ণ নতুন সিস্টেমে শুরু হয়েছে। আগের সিস্টেম প্রায় ১২ বছর যাবৎ চলেছে। কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সেগুলো আমরা রেক্টিফাই করছি এবং দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।”
বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৯৯৪ সালে কম্পিউটারভিত্তিক টিকেটিং সিস্টেম চালু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ২৭টি স্টেশনে কম্পিউটারাইজড টিকেট বিক্রি শুরু হয়। বর্তমানে ১০৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট ৭৭টি স্টেশনে কম্পিউটারের মাধ্যমে ইস্যু করা হচ্ছে।
দৈনিক প্রায় ৯০ হাজার ও মাসিক প্রায় ২৭ লাখ যাত্রীর টিকেট কম্পিউটারের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। এ সব টিকেটের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৩ লাখ টিকেট অনলাইন/মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
সিএনএস-এর পর সহজ লিমিটেডও মোট টিকেটের ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি করবে।
এর আগে সিএনএস-এর নিজস্ব সাইটের মাধ্যমে রেলের টিকেট বিক্রি হলেও এবার তা রেলওয়ের নিজস্ব সাইট (www.eticket.railway.gov.bd) থেকে পাওয়া যাবে।