পুলিশ প্রধান হিসেবে বিদায় নেওয়ার দিন আজ বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রাজারবাগে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বেনজীর আহমেদ।
নানা প্রশ্নের সঙ্গে চার বছর আগে কক্সবাজারের টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়েও তার প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “এটা একটা লিগ্যাল বিষয়। বিষয়টা অন্যায্য, অনৈতিক-এ ধরনের চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত আমার ব্যাক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই।”
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৬ মে মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের সঙ্গে কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন কক্সবাজারের টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা একরামুল হক।
তার মৃত্যুর সময়কার একটি অডিও প্রকাশ পেলে তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অভিযোগ ওঠে, র্যাব তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক সেই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ধরনের সব হত্যাকাণ্ডের বিচারিক তদন্ত করতে বলেছিলেন।
তখন র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বেনজীর। দুই বছর পর তিনি পুলিশ মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব পান। আজ বৃহস্পতিবার ছিল তার সরকারি চাকরির শেষ দিন।
গত বছর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে একরামকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হিসেবে বেনজীরের নামও নিষেধাজ্ঞায় আসে। আসে কক্সবাজারে র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন আহমেদের নামও।
র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকাকালে একরামুল হক খুন হওয়ার বিষয়টি তুলে বেনজীরকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সেই ঘটনাটি তাকে নাড়া দেয় কি না?
বেনজীর বলেন, “বিষয়টা হলো যে এটা আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি। এটা ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। তাদের সঙ্গে কিন্তু যে ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন তার কিন্তু ব্যক্তিগত বিরোধ নেই, ব্যক্তিগত বিষয়ও না। এটা আমরা অনেকেই চিহ্নিত করার চেষ্টা করি ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু সেটা না।”
তিনি বলেন, “আমাদের দেখার দায়িত্ব আমাদের সহকর্মী কেউ ম্যান্ডেটের বাইরে গেছেন কি না? যদি ‘ওভারস্টেপ’ করে থাকে, তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
একরামের ঘটনায় কোনো তদন্ত চোখে না পড়ার কথা এক সাংবাদিক জানালে প্রতিক্রিয়ায় বেনজীর দাবি করেন, একাধিক তদন্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, “ম্যাজিস্ট্রেটের এনকোয়েরি হয়েছে, আমি যখন চলে আসি, তখন ইন্টারনাল এনকোয়ারির আদেশ দিয়ে এসেছি। তদন্ত হয়নি, এ কথা ঠিক নয়। বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা কখনই মানবিক সীমাবদ্ধতার কারণে পরিপূর্ণভাবে পারফেক্ট হতে পারব না। আমাদের লক্ষ্য হবে হিউম্যান বিয়িং হিসাবে সবসময় পারফেকশনের কাছে পৌঁছানো।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে বেনজীর বলেন, “কারও কাছেই জাদুর কাঠি নেই যে আমি সব কিছু অর্জন করে ফেলব। অর্জনের বিষয়টা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া এবং কখনও শেষ না হওয়া প্রক্রিয়া। অর্জনের প্রক্রিয়া কখনও থেমে থাকে না। সংগঠন হলো জীবন্ত বিষয়, আর জীবন্ত বিষয়ের বৈশিষ্ট্য হলো ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।”