শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবিতে ৬ মরদেহ উদ্ধার

আজাদী অনলাইন | রবিবার , ২০ মার্চ, ২০২২ at ১০:৪৭ অপরাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন একটি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা গেছে।

আজ রবিবার (২০ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯ পেছন থেকে চাপা দিলে ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম এল আশরাফ উদ্দিন-২। লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জে যাচ্ছিল।

আজ রাতের মতো তল্লাশি অভিযান স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।

আজ রবিবার (২০ মার্চ) দুপুরে লঞ্চডুবির সাত ঘণ্টা পর এই ঘোষণা দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক শাহজাহান সিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, “উদ্ধারকাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে একটি টিম দুর্ঘটনাস্থলে রাখা হয়েছে। ডুবন্ত জাহাজ পানির উপরে তোলা হলে তার ভেতরে তল্লাশি চালানো হবে। পানির নিচে উদ্ধার অভিযান আগামীকাল (সোমবার) পুনরায় শুরু হবে।”

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ও একটি বার্জের সহায়তায় লঞ্চটিকে উঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে আজ সন্ধ্যায় শীতলক্ষ্যা পাড়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান।

তিনি বলেন, “রাত পৌনে ১০টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।”

এ সময় পরিচালক আরও জানান, লঞ্চটি পানির ২৫ মিটার (প্রায় ৫৫ হাত) গভীরে ডুবে আছে। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

সদর নৌ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, “রূপসী-৯ সিটি গ্রপের মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজ। জাহাজ চলাচাল সম্পর্কিত ওয়েবসাইট ভেসেলফাইন্ডারে রূপসী-৯ এর মালিক হিসাবে সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজের নাম রয়েছে।”

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহাকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

রাকিব আল রাজু নামে একজন কাছের আরেকটি লঞ্চ থেকে ওই ঘটনার ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে ফেসবুকে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

ভিডিওটেতে দেখা যায়, রূপসী-৯ জাহাজটি একপাশ থেকে চলন্ত লঞ্চটির উপর চেপে বসে। লঞ্চের আতঙ্কিত যাত্রীরা নদীতে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন। এ অবস্থা চলে প্রায় ২৫ সেকেন্ড। এক পর্যায়ে লঞ্চটি ডুবে যায়।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, ফায়ার সার্ভিসের দু’টি দলের পাঁচজন ডুবুরি এখানে কাজ করছেন। তারা পানির নিচ থেকে দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। আর একজন লঞ্চ যাত্রী সাঁতার কেটে ফিরে আসার পর মারা যান।

কতজন নিখোঁজ রয়েছে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর বলেন, “লঞ্চের যাত্রীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেখানে ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন তীরে উঠতে পেরেছেন। ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখনও ১৫ থেকে ২০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো স্বজন নিখোঁজ থাকার বিষয়ে কেউ অভিযোগ জানাননি।”

এ ঘটনায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আ ন ম বজলুর রশীদকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন ক্যাপ্টেন আবু সাইদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমান ও বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক)।

কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কমিটি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা সংস্থাকে শনাক্ত করবে। এছাড়া দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবে বলে এক আদেশে বলা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় স্থগিত ৪ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কাল
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা