১২০ মিনিটের লড়াইয়ে শেষ মুহূর্তে ম্যাচের নিষ্পত্তি প্রায় হয়েই যেত যদি পাবলো সারাবিয়ার প্রচেষ্টা গোল পোস্টে বাধা না পেতো। পরে পেনাল্টি শুটআউটেও তার শট পোস্টে লাগল। ইয়াসিন বোনো করলেন দু’টি সেভ। তাই স্পেনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল মরক্কো।
কাতারের আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার শেষ ষোলোর ম্যাচটির নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা গোলশূন্য ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৩-০ গোলে স্পেনকে হারিয়ে জিতেছে মরক্কো।
টাইব্রেকারে সারাবিয়ার শট পোস্টে লাগার পর কার্লোস সলের ও সের্হিও বুসকেতসের শট ঠেকান বোনো। স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমোনও সেভ করেন একটি। মাদ্রিদে জন্ম নেওয়া আশরাফ হাকিমি মরক্কোর চতুর্থ শটে বল জালে পাঠাতেই উল্লাসে মাতে দলটি।
এর আগে একবারই বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে খেলেছিল মরক্কো। ১৯৮৬ আসরে শেষ ষোলোয় জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছিল উত্তর আফ্রিকার দেশটি।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে চারবার পেনাল্টি শুটআউটে হারল স্পেন। ২০০৬ সালে ইউক্রেইনের বিপক্ষে সুইজারল্যান্ডের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে টাইব্রেকারে একটি গোলও করতে পারল না তারা।
জাপানের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারা ম্যাচ থেকে একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন এনে খেলতে নামে স্পেন। শুরু থেকে যথারীতি বল পায়ে রেখে খেলার চেষ্টা করে তারা। উল্লেখযোগ্য সুযোগ যদিও তৈরি করতে পারছিল না।
একাদশ মিনিটে বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় মরক্কো। মাদ্রিদে জন্ম নেওয়া আশরাফ হাকিমির শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।
২৫তম মিনিটে নিজেদের ভুলে বিপদে পড়তে বসেছিল মরক্কো। তাদের দুর্বল পাসে বল পেয়ে যায় স্পেন। বক্সে দানি ওলমোর শট গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়ে ক্রসবারে লাগে। যদিও অফসাইডের বাঁশি বাজে।
দুই মিনিট পর জর্দি আলবার ক্রস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দুরূহ কোণ থেকে পাশের জালে বল মারেন মার্কো আসেনসিও।
৩৩তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শটে চেষ্টা করেন মরক্কোর মাসাওয়ি, ঠেকিয়ে দেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমোন। বিরতির আগে সোফিয়ান বুফালের ক্রসে কাছ থেকে নায়েফ আগের্দের হেড উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
স্পেন লক্ষ্যে প্রথম শট নিতে পারে ৫৫তম মিনিটে। বক্সের বাইরে বাঁ দিকে ফ্রি-কিকে ছোট করে পাস দেন আসেনসিও, আর ওলমোর সোজাসুজি শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক ইয়াসিন বোন।
৬৩তম মিনিটে জোড়া পরিবর্তন আনেন স্পেন কোচ। আসেনসিওর জায়গায় আলভারো মোরাতা ও গাভির বদলি হিসেবে কার্লোস সলের মাঠে নামেন।
খানিক পর ফেররান তরেসকে তুলে মাঠে নামানো হয় নিকো উইলিয়ামসকে। ৮০তম মিনিটে ডান দিক থেকে তিনি দারুণ ক্রস বাড়ান বক্সে, প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জে শট নিতে পারেননি ওলমো।
মরক্কো দ্বিতীয়ার্ধে উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় ৮৬তম মিনিটে। ডান দিক থেকে হাকিম জিয়াশ ক্রসে দেন বক্সে, কিন্তু ওয়ালিদ ছেদদিরার শটে ছিল না জোর।
যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে সলেরের ক্রসে ডি-বক্সে মোরাতার হেড লক্ষ্যে থাকেনি। একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল স্পেন। ওলমোর ফ্রি-কিকে বল যাচ্ছিল জালের দিকে, ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন গোলরক্ষক। তাতে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
এখানে প্রথমার্ধের শেষ দিকে বড় সুযোগ পায় মরক্কো, ম্যাচেরই সেরা সুযোগ। কাছ থেকে ছেদদিরার সোজাসুজি শট পা দিয়ে ফিরিয়ে স্পেনকে বাঁচান সিমোন।
১১৫তম মিনিটে আরেকটি সুযোগ পান ছেদদিরা। বল নিয়ে অনেকটা দৌড়ে বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি, কিন্তু প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের চ্যালেঞ্জে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি।
দুই মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে সুযোগ তৈরি করে স্পেন। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে বক্সের সামনে থেকে শট না নিয়ে ভেতরে আনসু ফাতির উদ্দেশ্যে পাস দেন মোরাতা। তবে বল চলে যায় বাইরে।
অন্তিম মুহূর্তে ম্যাচের নিষ্পত্তি প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। সতীর্থের ক্রসে দূরের পোস্টে স্পেনের পাবলো সারাবিয়ার ভলি পোস্টে লাগে।