ভারী বর্ষণ, কর্ণফুলীর জোয়ার আর ‘অভিভাবকহীন খাল-নালার’ কারণে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহালো নগরবাসী। নিচু এলাকার সড়কে হাঁটু থেকে কোমরপানি ছিল আজ শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকালে।
এর মধ্যে বহদ্দারহাটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীর জলাবদ্ধ বাড়ি, গাড়ি ও গলিতে পানি থৈ থৈ করছিল। সেই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
আড়াই বছরেও দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় কেউ ক্ষোভ ঝেড়েছেন, কেউ আবার ধৈর্য ধরে জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার অনুরোধ জানিয়েছেন।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান, আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় টাইগারপাসের আমবাগান আবহাওয়া অফিস ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে যদিও এ সময় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস রেকর্ড করেছে ৪২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি।
সরেজমিন দেখা গেছে, শুধু বহদ্দারহাট নয় সকালে মাত্রাতিরিক্ত পানি উঠেছে নগরীর তিনপোল, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, শান্তিবাগ, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজারসহ নিচু এলাকায়।
সড়কগুলো উঁচু করার কারণে হাঁটুপানি দেখা গেলেও আশপাশের বাড়িঘরে কোমর পানি ছিল কর্ণফুলীর জোয়ারের সময়। এ সময় অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের নিচতলায় পানি ঢুকে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রিয়াজউদ্দিন বাজারের অনেক দোকানে পানি ঢুকে নষ্ট হয় পণ্যসামগ্রী।
আগ্রাবাদের বাসিন্দা এমএ কাদের বলেন, “আগে বৃষ্টি-জোয়ার এক সঙ্গে হলে এক্সেস রোড ডুবে যেত। এখন সেটি এত উঁচু করা হয়েছে যে আশপাশের বাসাবাড়ির নিচতলায় গলাপানি হলেও বাইরের কেউ দেখে না। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল পেতে হলে চসিক, সিডিএসহ সরকারি সব সংস্থার আন্তরিক সমন্বয়, কমিটমেন্ট দরকার।”
জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. মোবারক আলী বলেন, “জলাবদ্ধতা হয়নি, ভারী বর্ষণ, পূর্ণিমার জোয়ার আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় জলজট হয়েছে। খাল ও নালার গভীরতা কমে যাওয়া এবং নদীতে জোয়ার থাকায় বৃষ্টির পানি দ্রুত নামতে পারেনি। চাক্তাই খালে পানির ধারণক্ষমতা যেমন কমে গেছে তেমনি নাব্যতাও।”
মেয়রের বাড়ি-গাড়ির ছবি ফেসবুকে সয়লাব হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বহদ্দারহাট এমনিতে নিচু এলাকা। তার ওপর চাক্তাই খালের গভীরতা এখন ২-৩ ফুটের বেশি নেই। তাই ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুরের নালা থেকে আসা পানি চাক্তাই খাল দিয়ে নামতে পারেনি দ্রুত। মেয়রের বাড়িতে গত বছরও পানি উঠেছিল। এর আগেও প্রতি বছর উঠেছে। এটা নতুন কিছু নয়।”
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সিডিএ যে খাল ও নালাগুলোর কাজ করছে, স্লুইসগেট বসিয়েছে সেগুলো এখনো চসিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এসব স্লুইসগেট অপারেট করার জন্য জনবল নেই, পাম্প হাউস বসানো হয়নি। আবার নাগরিকদের সচেতনতার অভাবে এখনো নালায় ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। আমরা নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ কাজের বাইরে চসিক-এর প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে ৪১টি ওয়ার্ডে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে মাটি উত্তোলনের কাজ করিয়েছি।”
বৃষ্টির পানি আটকে যাওয়া স্থানে চসিক-এর কর্মীদের দেখা যায়নি এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের সুপারভাইজারদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করেছি। সেগুলো নোট করেছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।”