“আমাদের সীমান্তে কাউকে প্রবেশ করতে দেব না”

সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৯:৪২ অপরাহ্ণ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, “আমাদের সীমান্তে আমরা কাউকে প্রবেশ করতে দেব না। বিচ্ছিন্নতাবাদী কিংবা মিয়ানমার আর্মি বা তারা যারাই হোক তাদের সীমানায় তারা যুদ্ধ করুক বা যা ইচ্ছা করুক কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু যা করার সেখানে করবে। আমাদের সীমানায় ঢুকতে দেব না। এটা আমাদের ক্লিয়ার ম্যাসেজ। সীমান্তে আমাদের বিজিবিও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দিন-রাত দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মনে করে তারা সঠিক কাজটাই করছে।”

তিনি আজ বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিজিবির প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের ৯৮তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “মিয়ানমারে যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাদের নিজেদের মধ্যে অনেক সমস্যা। তারা অনেক সংকটের মধ্যে পড়েছে। আরাকান আর্মিসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলছে। আমরা শুনেছি এবারো তারা আমাদের সীমানা এলাকায় আরাকান আর্মির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তাদের এসব যুদ্ধের সাথে আমাদের দেশের কোনো সম্পর্ক নাই। আমরা মনে করি তারা সেখানে যুদ্ধ করলে আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ ঘটবে না এবং ঘটাবে না। বিজিবি এখন পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সীমান্ত অঞ্চল রক্ষা করে চলছে। মিয়ানমারের পরিস্থিতির কারণে সীমান্তে সৈনিক বাড়ানো হয়েছে যাতে করে তারা বিজিবি’র চৌকিগুলো সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে। আমরা নির্দেশ দিয়েছি আরকান আর্মি কিংবা বিজিপি বা অন্য কোনো বাহিনী আমাদের সীমানায় যেন না ঢুকে।”

এর আগে বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে সশস্ত্র সালাম জানিয়ে ৯৮তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।

অভিবাদন মঞ্চে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ, এসপিপি, এনএসডব্লিউসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মসিউর রহমান, এনডিসি, পিএসসি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব উপস্থিত ছিলেন।

কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যের শুরুতেই তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম, ৭৭ জন বীরপ্রতীক ও ৬৯৮ জন বীর শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীণ সৈনিকদের মধ্যে তারই প্রতিফলন আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত ও মুগ্ধ করেছে। বিজিবির চারটি মূলনীতি ‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’ এর প্রতি উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে তোমাদের উপর অর্পিত যেকোন দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করতে হবে। ‘সীমান্তের অতন্ত্র প্রহীর’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সীমান্ত প্রহরার মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্বের অখন্ডতা রক্ষা করা।”

আসাদুজ্জামান খান আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল, পেশাদার ত্রিমাত্রিক দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এ বাহিনী সীমান্ডের অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে দেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সাথে পালন করছে। বিজিবি সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোন ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমনে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে।”

তিনি আরো বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর হতে এই বাহিনীকে একটি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ও অত্যাধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোকে ব্যাপক পরিবর্তন করে বিজিবি আজ একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে জল, স্থল ও আকাশ পথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্ট এর অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স, ইকুপমেন্ট স্থাপন, আধুনিক এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। সরকারের সাহসী পদক্ষেপে বর্ডার রিং রোড প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত সফলতার সাথে এগিয়ে চলছে।”

বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নবীন সৈনিকরাও ভিডিও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়।

বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ এবং চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নে ৯৮তম ব্যাচে মোট ৮৪৯ জন রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। এরমধ্যে পুরুষ ৮০৩ জন এবং নারী রিক্রুট ৪৬ জন।

এদিকে, কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে নবীন সৈনিকদের মধ্যে শারীরিক উৎকর্ষে সেরা নবীন সৈনিক (পুরুষ) মো. লিটন মিয়া, একই বিষয়ে সেরা নবীন সৈনিক (মহিলা) শিরি খাতুন, ফায়ারিংয়ে আমিনুল ও সর্ববিষয়ে সেরা নবীন সৈনিক মো. আনোয়ার হোসেনকে ক্রেষ্ট তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধর‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সহসা উঠছে না
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজার থেকে বড় ইলিশ যাচ্ছে কোলকাতায়