তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কোনো কোনো জায়গায় ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর কোনো কোনোটিতেও লোডশেডিং হয়েছে এবং সেখানে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বিএনপি’র আমলে তো ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পারেনি। বরং তখন বিদ্যুতের দাবিতে মানুষ বিক্ষোভ করেছে, তখন কানসাটে তাদের ওপর গুলি করে অনেককে হত্যা করেছে। চট্টগ্রামে মোমবাতি নিয়ে মিছিল হয়েছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও হয়েছে। মানুষ হারিকেন নিয়ে মিছিল করেছে। এখন হারিকেন কি এটি বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারবে না যেহেতু হারিকেনের ব্যবহার নাই। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন।”
আজ মঙ্গলবার(১২ জুলাই) বিকেলে নগরীর দেওয়ানজি পুকুর পাড়স্থ বাসায় সমসাময়িক বিষয়ে ব্রিফিংকালে বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী’র বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বিএনপি অফিসের চার দেয়াল ও নেতাকর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চোখ মেলে বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে একটু তাকানোর জন্য বিএনপি নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “মানুষ এবার স্বস্তির মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আযহা পালন করার জন্য নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পেরেছে। ইসলামি ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মানুষ ঈদুল আযহা উদযাপন করেছে। কোরবানির পশুর ক্ষেত্রেও আমরা যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি সেটি এবার আরো স্পষ্ট হয়েছে। কারণ ভারতীয় গরু এবার আসেনি বললেই চলে।”
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “সরকারের কঠোর অবস্থান ও সিদ্ধান্তের কারণেই সীমান্ত দিয়ে কোন পশু দেশে ঢুকতে পারেনি, যাতে আমাদের দেশের খামারিরা উপকৃত হয়। এক্ষেত্রে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশ আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর ৯২ তম দেশ। কিন্তু আমরা উৎপাদনের দিক দিয়ে পৃথিবীর শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধান উৎপাদনে আমরা পৃথিবীতে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম।”
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের গরু ছাগল দিয়েই এবার ঈদুল আযহার চাহিদা পূরণ করা সম্ভবপর হয়েছে। অনেক গরু ছাগল বিক্রি না হওয়ায় ফেরতও গেছে। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বেশি যোগান ছিল। এগুলো সরকারের নানামুখি নীতির কারণেই সম্ভব হয়েছে।”
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, “সমগ্র পৃথিবী, অর্থনৈতিকভাবে অনেক সামর্থবান দেশগুলোও সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। প্রধানমন্ত্রী সেভাবেই সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের আহবান জানিয়েছেন। যারা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পারেনি, বিদ্যুতের দাবিতে মিছিলকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে তাদের বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলারই অধিকার থাকে না। আসলে বিএনপির কাছে কোন ইস্যু নেই তো, তাই কিছু একটা তো বলতে হবে, সেজন্যই কথা বলে।”
তিনি বলেন, “পৃথিবীতে মহামারি চলছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আপনারা জানেন পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও নানা প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র ছিল। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু যেমন নির্মিত হয়েছে পৃথিবীর এই সঙ্কটকালীন সময়ের মধ্যেও সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতাকে উপড়ে ফেলে দেশ সমৃদ্ধির পথে অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় দেশ পৌঁছাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। পবিত্র ঈদ উপলক্ষে সেই প্রার্থনা আমরা করেছি, আজকেও একই প্রত্যাশা করি।”
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তিনটি প্রকল্পে এগার হাজার কোটির কাছাকাছি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যারা এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে এই টাকার সদ্ব্যবহার ও সমন্বিতভাবে কাজ করা তাদের দায়িত্ব। যারা জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আমি তাদের সবসময় তাগাদা দিয়ে আসছি।”
তিনি বলেন, “আমি নিজেও চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই বড় হয়েছি। মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার যেহেতু জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে গতবারের তুলনায় এবার পানি কম উঠবে। যেহেতু জলাবদ্ধতা প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি মাঝপথে আছে, সেজন্য মানুষ এখনো সুফল পাচ্ছে না। মানুষ যাতে তাড়াতাড়ি সুফলটা পায়, সেই কথাটাই তাদেরকে বলেছি। বৃষ্টি আরো দু’মাস হবে, এই দু’মাস যাতে কাজগুলো বন্ধ রেখে কাজের জন্য যেখানে খাল ভরাট করা হয়েছে, সংকুচিত করা হয়েছে, সেসমস্ত জায়গা কেটে দেয়ার জন্য তাদের অনুরোধ জানিয়েছি, যাতে আবার বৃষ্টি হলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ থাকে। বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলে যাতে কাজ শুরু হয়।”