“এসব নিয়ে আমরা মোটেও আতঙ্কিত নই”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন

আজাদী অনলাইন | মঙ্গলবার , ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:৫৪ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের ওপর নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা নেই উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, “আমেরিকা বিভিন্ন দেশের ওপরে, যাদের ওপর চাপ ফেলতে চায়, তাদের ওপরে স্যাংশন-ট্যাংশন দেয়, আবার স্যাংশন উঠিয়ে… মনে আছে না, মোদীর ওপরে স্যাংশন দিল, উঠায়া নিল। আমেরিকা হাজার হাজার স্যাংশন দেয়, বড় লোকেরা হাজার হাজার স্যাংশন দেয়, এগুলা একদিকে আসে, একদিকে যায়। সুতরাং আমরা এসব নিয়ে মোটেও আতঙ্কিত না।” 

রাষ্ট্রদূত হাসের ‘নিরাপত্তা উদ্বেগ’ এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষাপটে নতুন নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

ওই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের চেষ্টার মধ্যে ‘নিরাপত্তা উদ্বেগের’ কারণে সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান তড়িঘড়ি শেষ করার কথা তুলে ধরেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। 

মার্কিন দূতাবাস জানায়, গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার শাহীনবাগে ‘গুমের’ শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখির বাসায় যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তখন ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। জিয়াউর রহমানের সময়ে ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যেসব সদস্যের ফাঁসি, কারাদণ্ড হয়েছিল তাদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন মায়ের কান্না। 

শাহীনবাগে ঘটনার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে দেখা করে ‘নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ’ তৈরি হওয়ার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত হাস। 

পরদিন ১৫ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে এক আলোচনায় রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা আবারও তুলে ধরেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। 

এর মধ্যে বছর শেষের ছুটিকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার সারা বাংলাদেশের জন্য ‘নিরাপত্তা সতর্কতা’ জারি করে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। 

নিরাপত্তা সর্তকর্তায় বলা হয়, “ছুটির মৌসুমে বাংলাদেশে বেশি সংখ্যায় অপরাধ ও সহিংস উগ্রবাদী কার্যক্রমের আশঙ্কা রয়েছে। 

এতে আরো বলা হয়, “মার্কেট, শপিং মল, বিমানবন্দর, ক্লাব, রেস্তোরাঁ, উপসনাস্থল, পরিবহন টার্মিনাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পর্যটকদের আগাগোনার স্থলের মতো জনসমাগমস্থলে পরিকল্পিত আক্রমণ এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রায় ঘটে থাকে। বিক্ষোভ, ছুটির দিনের আয়োজন আর উদযাপনের মিলনমেলার মতো পাবলিক ইভেন্টে সংঘাতের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে।” 

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের মন্তব্যকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ হিসাবে বর্ণনা করে তার কড়া সমালোচনা করে আসছে সরকার। 

তবে আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, “দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকার কারণে আমেরিকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘সাজেশন’ দিয়ে থাকে। আমাদের সাথে আমেরিকার খুব ভালো সম্পর্ক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অনেক এনগেজমেন্ট। এ বছরই আমরা প্রায় ১৬টা মিটিং করেছি ওদের সাথে। আমাদের সাথে সম্পর্ক ভালো বলে তারা আমাদেরকে বিভিন্ন রকম সাজেশন…আপনার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো থাকলে আপনি সাজেশন দেবেন। তারা আমাদের সাজেশন দেয়, যেটা ভালো।” 

মার্কিন দূতাবাসের নতুন নিরাপত্তা সতর্কতার বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সেটা ওদের দায়দায়িত্ব এড়ানোর জন্য কারণ ওদের লোক যদি কেউ এ দেশে আসে, কেউ যদি আহত হয় তাহলে যাতে দায়দায়িত্ব নিতে না হয়…এটার জন্য তাদের জিজ্ঞেস করুন।” 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “আপনি কি এ দেশে আতঙ্ক দেখেন কোনো? তাহলে আপনি এগুলো নিয়ে এত চিন্তিত কেন? এক কানে শোনেন, এক কানে ফেলে দেবেন।” 

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামেও শুরু করোনা টিকার চতুর্থ ডোজের কার্যক্রম
পরবর্তী নিবন্ধদেশে এলো আমিরাতে মৃত্যুবরণকারী ৩ প্রবাসীর মরদেহ