রাজধানী ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গাল্ফ এয়ারের টিকেট নিয়ে উপস্থিত হয়েও ফিরে আসতে হয়েছে অন্তত ১৮ জন যাত্রীকে।
তারা টিকেট কেটেছিলেন বাহরাইন হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য।
তাদের অভিযোগ, এয়ারলাইন্সের কাউন্টার থেকে তাদের বলা হয়েছে, তাদের হাতে থাকা টিকেট ‘ভুয়া’। তবে এ বিষয়ে গাল্ফ এয়ারের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশের বিমানবন্দর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তাপস কুমার দাস জানিয়েছেন, বোর্ডিং পাস না পাওয়ায় যাত্রীদের ফিরে যাওয়ার বিষয়টি তারাও জানতে পেরেছেন। তবে যাত্রীরা কেউ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত এসপি জিয়াউল হক বলেন, “ওই যাত্রীদের টিকিট ভুয়া ছিল। তাদের টিকেটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।”
গালফ এয়ারের ফ্লাইট জিএফ ২৫১ ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় শুক্রবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে। ওই ফ্লাইটে বাহরাইন হয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল সুমি বেগমের। সেজন্য তিনি বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে যান কিন্তু বোর্ডিং পাস সংগ্রহের জন্য এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে গেলে তার হাতের প্রিন্ট করা টিকেটের কাগজ দেখে কর্মীরা বলেন, সেটি ‘ভুয়া’।
ওই ফ্লাইটের এরকম ১৮ জন যাত্রী শুক্রবার ভোরে যেতে পারেননি। তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে ছয়টি পৃথক এজেন্সির নাম পাওয়া গেছে যাদের মাধ্যমে তারা গালফ এয়ারের টিকেট কেটেছেন কিন্তু বোর্ডিং পাস না পাওয়ায় তাদের কেউ বাসায় ফিরে গেছেন, কেউ বাড়ির পথে, আর কেউ বিমানবন্দরেই অবস্থান করছেন।
গাল্ফ এয়ারের চেক ইন কাউন্টারে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “টিকেটগুলো আমাদের সিস্টেমে দেখাচ্ছিল না। সেই কারণে তাদের বোর্ডিং ডিনাই করা হয়েছে।”
কর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসা যাত্রী সুমি বেগম বলেন, “কাউন্টার থেকে বললো-‘তোমাগো টিকেট সব ভুয়া’। হ্যারা আমাগো আর যাইতে দিল না। বিমানবন্দরে দালালরে ফোন করলাম, সেও কিছু বলতে পারে না। পরে জানতে পারলাম টিকেট কনফার্ম কইরা আর টাকা দেয় নাই। তাই কাউন্টার থাইকা বলছে এই টিকেট অনলাইনে শো করতাছে না।”
গাইবান্ধার শাফিউল আলমও প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে যাচ্ছিলেন। শুক্রবার বিকেলে যখন ফোনে তার সঙ্গে কথা হয় তখন তিনি গাইবান্ধার বাসে উঠে বসেছেন।
তিনি বললেন, সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য দালালকে চার লাখ টাকা দিয়েছেন। শুক্রবার ভোরে ফ্লাইট ধরার জন্য শেষ রাতে চেক ইন কাউন্টারে দাঁড়িয়েও তাকে বিফল হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “যারা আমাদের টিকেট কাটছে তারা নাকি টাকা পেমেন্ট করে নাই। মোট ১৮ জনের এইরকম সমস্যা হয়েছে।”
যেই দালালের মাধ্যমে শাফিউল সৌদির টিকেট কেটেছেন, তার নাম ইলিয়াস। তিনি দাবি করলেন, যাত্রীদের টাকা তিনি ট্র্যাভেল এজেন্সি রহমান ওভারসিজকে পরিশোধ করেছেন। এখন কেন এই সমস্যা হলো তা বুঝতে পারছেন না।
ইলিয়াস বলেন, যাদের ভিসার মেয়াদ ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল তাদের শুক্রবার বিমানে উঠিয়ে দেবে বলেছে ট্রাভেল এজেন্সি। আর যাদের মেয়াদ ১১ তারিখ পর্যন্ত, তাদের পরদিন ফ্লাইট ধরানোর কথা বলেছে।
ট্র্যাভেল এজেন্সি রহমান ওভারসিজের বনানীর অফিস শুক্রবার বন্ধ ছিল। ওয়েবসাইটে দেওয়া তাদের তিনটি নম্বরে ফোন করা হলেও কেউ ধরেননি।
বোর্ডিং পাস না পাওয়া আরেক যাত্রী আশরাফুল হক জানালেন, তিনি তখনই বিষয়টি দালাল ও ট্র্যাভেল এজেন্সিকে জানিয়েছিলেন। সাজেদুল ইন্টারন্যাশনাল নামের ওই ট্র্যাভেল এজেন্সি তাকে শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে কাতার এয়ারওয়েজের টিকেট করে দিয়েছে। ওই টিকেট যে ঠিক আছে, সেটা তিনি কাউন্টারে গিয়ে আগেভাগেই নিশ্চিত করে এসেছেন।
গাল্ফ এয়ারের টিকেটে কেন সমস্যা হলো সেই বিষয়ে সাজেদুল ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আল মামুন নামে এক কর্মকর্তা জানান, তারা দু’জন যাত্রীকে টিকেট কেটে দিয়েছিলেন যাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা টিকেট কেটে দিই টিকেটিং এজেন্সির মাধ্যমে। সেভাবেই দিয়েছি। তাদের দিক থেকে কোথাও সমস্যা হয়েছে। কারণটা আমরা জানতে পারিনি।”